নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, "গল্প-কথার আসর"-এর আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ । আমি রাজীব ঘোষ । আজকে আপনাদের সামনে উপস্থিত করবো আর এক কালজয়ী সাহিত্যিককে । তিনি শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ।
শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় একাধারে কবি, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং বিখ্যাত সাহিত্যিক। এই ব্যাপারে প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাথে তাঁর মিল আছে। ১৯০১ সালে বর্ধমান জেলার অন্দালে তাঁর জন্ম। যৌবনে তিনি ছিলেন কবি। পরে কয়লা খনিতে কাজের সুত্রে তিনি শ্রমিক মানুষদের শোষিত জীবনের সাথে পরিচিত হন এবং তাঁর গদ্য রচনায় সেই চিত্র ফুটে উঠতে থাকে। শৈলজানন্দ ছিলেন কল্লোল গোষ্ঠীর সাহিত্যিক। অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরোলিধর বসু, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের সাথে তাঁর সখ্যতা ছিল। "কল্লোল" ও "কালিকলম" পত্রিকা কে ঘিরে সাহিত্য আন্দোলনের পুরো ভাগে ছিলেন তিনি। তাঁর চলচিত্র পরিচালকের জীবন ও কম বিখ্যাত নয়। নিজের কাহিনী ও পরিচালনায় তাঁর বিখ্যাত ছবি "নন্দিনী", "বন্দী", "শহর থেকে দূরে", "মানে না মানা", "আমি বড় হব", প্রভৃতি। আকাশবাণী-তে তিনি বহু নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছিলেন। তাঁর বিপুল সাহিত্য কর্ম এর জন্যে তিনি আনন্দ পুরস্কার, উল্টোরথ পুরস্কার এবং যাদবপুর ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় এর ডি-লিট পান। ১৯৭৬ সালের ২-রা জানুয়ারি শৈলজানন্দ প্রয়াত হন ।
শ্রোতা বন্ধুরা, আজ কৃষ্ণা নামের যে গল্পটি পাঠ করব সেটি শৈলজানন্দ-এর শ্রেষ্ঠ গল্পগুলি-র অন্যতম। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ডঃ নন্দগোপাল সেনগুপ্ত বলেছেন যে এই গল্পটি বিশ্ব সাহিত্যের সেরা গল্পগুলি র মধ্যে স্থান পাওয়ার যোগ্য। গল্পটি কামীনি-কাঞ্চন নামেও প্রকাশিত হয়েছিল এবং প্রখ্যাত পরিচালক শ্রী তপন সিংহ ১৯৫৫ সালে "উপহার" নামে একটি চলচিত্র নির্মাণ করেন। লেখকের সুগভীর বাস্তবতা বোধ, নিপীড়িত মানবাত্মার প্রতি মমতা, নারী জীবনের দুঃখ দুর্দশার প্রতি অপার সহানুভূতি, এই গল্পের ভাষায় এবং চরিত্রচিত্রণে বর্ণিত আছে। এই গল্পের মূল নায়ক হয়ত পুরুষ, কিন্তু শুনলেই বুঝবেন নারী চরিত্র গুলিই স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল। এইটুকু বলে এবার তাহলে শুরু করি, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের গল্প - "কৃষ্ণা" ।