নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, "গল্প-কথার আসর"-এর আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য অনেক ধন্যবাদ । আমি রুদ্র দত্ত । আজকে পাঠ করবো নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি সামাজিক, বড়দের জন্য লেখা গল্প ।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের এইরকম গল্প আমরা এই আসরে এর আগেও পাঠ করেছি । তখন যেমন বলেছি, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় যখন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প লিখেছেন, তখন তার মধ্যে সমাজচেতনা, কিছুটা বিদ্রোহের ভাব, অতি পরিষ্কার । আজকের এই গল্পটির মধ্যেও সেইরকম একটি সমালোচনা এবং চাপা বিক্ষোভের ভাব আছে ।
স্বৈরাচারী চায় জনসাধারণকে দাবিয়ে রাখতে, তাই বিভেদবুদ্ধি স্বৈরাচারের বন্ধু । সাধারণ মানুষ সকলেই যদি কোনো না কোনো অর্থে নিজেকে সংখ্যালঘিষ্ঠ মনে করে, তাহলে সকলেরই তো স্বাভাবিক প্রবণতা হবে রাষ্ট্রের এবং সমাজের শক্তির কাছে মাথা নীচু করে থাকার - সে রাষ্ট্র বা সমাজ যখন অন্যায় পক্ষপাতিত্ব করে, তখনও প্রতিবাদ করার সাহস না করার । আর বহু বহুযুগ ধরে পুরুষশাসিত সমাজ কোনো এক আশ্চর্য ভাবে মানবজাতির ঠিক অর্ধেককে সংখ্যালঘিষ্ঠ করে রেখেছিলো । তার সংস্কার অনেকদিন হলো আরম্ভ হয়েছে, কিন্তু সম্পূর্ণ হবার কাছাকাছিও পৌঁছয়নি এখনও । মেয়েদের হেয় করে, দুর্বল করে রাখার প্রচেষ্টা আর সামাজিক স্বৈরাচারের মধ্যে তাই একটা পরিষ্কার সম্পর্ক আছে । দুর্ভাগ্যক্রমে, সেই অশুভ যোগসূত্রের স্বরূপ সারা পৃথিবীতে আজ আমাদের সবাইকে অতি প্রকটভাবে দেখতে, শুনতে হচ্ছে ।
রবীন্দ্রনাথ তীব্র আর্তনাদে লিখেছিলেন, "নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার, হে বিধাতা?" আজ একশো বছর পরে সেই একই প্রশ্ন আবার আমাদের সামনে - তবে এইটুকু অগ্রগতি হয়তো হয়েছে, যে এর মধ্যে বিধাতার কোনো বিশেষ ইচ্ছা অন্তর্নিহিত নেই সেটুকু এখন স্পষ্ট - এই পাপ নেহাত মানুষেরই । সেই অধিকার গ্রহণ করা যত কঠিনই হোক, এবং সমাজ সেই অধিকারের পথে যতই বাধা সৃষ্টি করুক, মানবসভ্যতার এগোবার রাস্তা এই পথেই ।
তাই এই বিশেষ বছরে, আন্তর্জাতিক নারীদিবসের সপ্তাহান্তে, মহাশ্বেতা যেমন "খেরোর খাতা" থেকে পাঠ করেছে, আমার মনে হলো এই গল্পটির পাঠ আপনাদের কাছে উপস্থিত করি । আরম্ভ করছি আজকের পাঠ, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প, "কনে-দেখা আলো" ।