Rajib and Rudra introduce Swarnali, a new reader for this podcast; Swarnali reads a story by Ashapurna Devi. Released November 15, 2025. Episode 535 of Season Six.
রুদ্র: শ্রোতা বন্ধুরা, গল্প কথার আসরের আজকের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্যে আপনাদের জানাই অশেষ ধন্যবাদ। আমি রুদ্র দত্ত।
রাজীব: আর আমি রাজীব ঘোষ। আজ আমরা দুজন একসঙ্গে উপস্থিত, তার কারণ আজকের বৈঠকটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কি বলিস রুদ্র ?
রুদ্র: তা তো বটেই, আর সেই সঙ্গে, আমি বলবো, আনন্দজনকও । অন্তত আমাদের কাছে তো বটেই।
রাজীব: আনন্দ বলে! দল ভারী করতে কার না ভালো লাগে, আজকের দিনে। আর নিজেদের ভারটাও একটু হাল্কা করা যায় ।
রুদ্র: এই রাজীব ! একটা গুরুত্বপূর্ন, তাৎপর্য পূর্ণ কাজ করতে চলেছি আজকে । ফাজলামো করা কি ঠিক হচ্ছে ?
রাজীব: (হেসে) না না ফাজলামো নৈব নৈব চ। সত্যি কথাই বলছি, কেবল একটু মজা করে । রুদ্র মূর্তি ধরিস না - বৈঠকের মজাটাই মাটি হয়ে যাবে। শ্রোতাবন্ধুরা, আজকে আপনাদের সঙ্গে অত্যন্ত আনন্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব আমাদের আসরে নবাগতা এক কথকের। - কি তার নাম, রুদ্র ?
রুদ্র: আমরা তার নিজের মুখেই শুনে নেবো তার নিজের কথা । - হে নবাগতা কথক, এসো এদিকে, আমাদের শ্রোতাবন্ধুদের জানাও, কে তুমি, কি তোমার পরিচয়।
স্বর্ণালী: নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, আমি স্বর্ণালী সান্যাল। পেশায় আমি একজন climate scientist — জলবায়ু, প্রকৃতি আর পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করি। আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে, সমুদ্রের স্বর উঠছে, ঋতুর ছন্দ পাল্টে যাচ্ছে — যা শুধু বিজ্ঞান নয়, আমাদের প্রতিদিনের জীবনও। আমার কাজ হলো বোঝা — কী বদলাচ্ছে, কেন বদলাচ্ছে, আর আমরা কীভাবে এই দ্রুত পরিবর্তনের সাথে তাল রেখে এগোতে পারি । আর ব্যক্তিগত জীবনে আমার প্রধান পরিচয় এইটাই, যে আমি বাঙালী । অন্য অনেক বাঙালীর মতোই, বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির চিন্তা, চর্চা, আমার মনের বিরাট একটা জায়গা অধিকার করে আছে । আর তাই এই পডকাস্টে কথক হিসেবে যোগদানের প্রচেষ্টা ।
রুদ্র: বাঃ বাঃ ; আমাদের পডকাস্টে স্বাগতম, স্বর্ণালী ।
রাজীব: সুস্বাগতম !
রুদ্র: প্রথমেই বলি যে আমাদের এই বৈঠকে তুই কথক হিসেবে যোগ দিতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিস, এর জন্যে আমরা খুবই আনন্দিত, আর কৃতজ্ঞ । আমাদের পডকাস্ট নেহাতই ছোটো প্রচেষ্টা, তাও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য আমরা যেটুকু করতে চাইছি তাতে যোগদানের জন্য তোকে সাধুবাদ ।
রাজীব: কেন রে, আমরা কি এমন অসাধু যে আমাদের বৈঠকে স্বেচ্ছায় কেউ এগিয়ে আসবে না, ধরে বেঁধে আনতে হবে?
রুদ্র: (হেসে) না, তা নিশ্চয়ই নয়, বরং উল্টোটাই; যারাই এসেছি তো স্বেচ্ছাতেই এসেছি, কাউকেই তো ধরে-বেঁধে আনা হয়নি । কিন্তু কথক হওয়া মানে কিছু দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া তো বটেই - সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপার তো আছেই, আর তার উপর বাংলা সাহিত্যের নানা কোণ থেকে বিভিন্ন মণিকণা সন্ধান করে আনা, যা শ্রোতাবন্ধুদের কাছে চিত্তাকর্ষক, আবার চিন্তা-উদ্রেককারী হতে পারে - কিছুটা সময় এবং কষ্টসাপেক্ষ তো বটেই । আমরা যে যখন যতটা করতে পারি, তার ভরসাতেই তো পথ চলা । তাই নতুন একজন সহ-কথককে পেয়ে আমরা ভারী খুশী ।
রাজীব: তা স্বর্ণালী, তুমি আমাদের এই পডকাস্ট এ আসার অনুপ্রেরণা পেলে কথা থেকে? মানে কি তোমাকে টেনে আনলো হেথায়, সেটা যদি একটু বলো আমাদের শ্রোতা বন্ধুদের।
স্বর্ণালী: আমার জীবনের ভিত্তি তৈরি হয়েছে গল্প শোনার মধ্য দিয়ে। বাবা ছিলেন আমার প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় গল্পকার — ছোটবেলায় বাবার মুখে গল্প না শুনলে সত্যিই আমার ঘুম আসতো না! বড় হয়ে বুঝেছি — গল্প শুধু ঘুম পাড়ায় না, গল্প মনকেও জাগিয়ে দেয়। গল্প আমাদের নিয়ে যায় অন্য আলোয়, নতুন ভাবনায়, নরম অনুভূতিতে। ভাবলাম, আমিও একটু চেষ্টা করি —হয়তো আমার পাঠ করা গল্প শুনে আপনারাও সামান্য সময়ের জন্য ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তার একটু ঊর্দ্ধে যেতে পারবেন।
রুদ্র: সাধু, সাধু ! খুব ভালো লাগলো শুনে । বেশ, এই বার বল যে কি দিয়ে তোর ডেবিউ হবে? কার লেখা পড়বি প্রথমে আর কেন পড়বি সেই সাহিত্যিকের লেখা।
স্বর্ণালী: আমার প্রথম পাঠ আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প — “বন্দিনী”। আশাপূর্ণা দেবী র সমন্ধে এই গল্প কথার আসরে নতুন করে কিছু বলার নেই, আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্পগুলোতেও আছে একই গভীরতা — জীবনের ছোট ছোট দৃশ্য, কিন্তু প্রতিটা দৃশ্যেই লুকিয়ে থাকে বড় সত্য।
রাজীব: আশাপূর্ণা দেবী কে দিয়ে শুরু করার থেকে ভালো সূচনা আর হতে পারে না। খুব ভাল পছন্দ, নিঃসন্দেহে। অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো।
রুদ্র: আশাপূর্ণা দেবীর কিছু গল্প এই আসরে পাঠ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটাও ঠিক যে এই অসামান্যা যুগপ্রবর্তক লেখিকার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক লেখাই আমরা পড়িনি । - "বন্দিনী" গল্পটি প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, এই আসরে আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম গল্প আমরা যেটি পাঠ করেছিলাম তো হলো "স্বপ্নলীনা" । এই গল্পের এবং সেই গল্পের কেন্দ্রে যে দুটি নারী চরিত্র, তারা একই ধরণের কারাগারে বন্দিনী - কিন্তু সেই কারাগারের প্রাচীর ও গরাদ দুই ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন । তৎকালীন সমাজে নারীর স্থান, নারীকে সীমাবদ্ধ করে রাখার যত বিচিত্র গন্ডী, দেওয়াল, তা নিয়ে আশাপূর্ণা গভীর ভাবে ভেবেছিলেন, ব্যথা পেয়েছিলেন, এবং যুগান্তকারী অনেক লেখা লিখেছিলেন ।
রাজীব: এই আসরে ভবিষ্যতে স্বর্ণালীর কণ্ঠে হয়তো সেগুলিও শুনতে পাওয়া যাবে, এই আশাও রইলো । - আজকের আসর তোমার হাতে - বা কণ্ঠে - ছেড়ে যাওয়ার আগে আর একটা কথা, আমাদের এই আসরের শ্রোতা বন্ধুদের জন্যে কি তোমার কিছু বলার আছে, স্বর্ণালী? তাদের কাছে কিছু আবেদন আছে?
স্বর্ণালী: বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার এক বিশাল সমুদ্র। গল্প, চরিত্র, সম্পর্ক, হাসি-কান্না—সবই যেন ঢেউ হয়ে এসে আমাদের ছুঁয়ে যায়। কিন্তু আজকের জীবনে—ফোন, স্ক্রিন, নোটিফিকেশন, ডেডলাইন… এই তাড়াহুড়োর মধ্যে আমরা ধীরে ধীরে গল্প থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। রাজীবদা আর রুদ্রদা যেভাবে এই অসীম সাহিত্যসমুদ্রকে আমাদের কাছে এনে দেয়— তা সত্যিই অনুপ্রেরণার। ভাবলাম, আমিও যদি একটা ছোট্ট ঢেউ যোগ করতে পারি …
“বন্দিনী” গল্পটা ছোট, তাই গল্পে ঢোকার আগে গল্পটার সম্মন্ধে আমি বেশি কথা বলবো না, শ্রোতাবন্ধুরা । বরং গল্প পাঠ শেষ হওয়ার পরে আপনাদের চিন্তার খোরাক হিসেবে কাছে রেখে গেলাম: শংকর, চারুবালা বা তারণাথের মধ্যে আপনারা কি কাউকে চিনতে পেরেছেন? আপনাদের নিজেদের জীবন বা অভিজ্ঞতা থেকে? আজ - আশাপূর্ণা এই গল্প লেখার পঞ্চাশ বছরেরও বেশী পরে ?
এইটুকু বলেই আজ আমার “গল্প কথার আসর” -এর যাত্রা শুরু করবো ।
রুদ্র: তাহলে তো পরিচয় হয়েই গেল। তাহলে শুরু করে দে পাঠ, আর আমি আর রাজীবও আজকের মতো ছুটি পাই ।
রাজীব: না না, ছুটি না - চিন্তার সময় পাই, নতুন ভাবনার সময় পাই। - শ্রোতাবন্ধুরা, নতুন প্রজন্মের একজন কথক কে আপনাদের সামনে উপস্থিত করতে পেরে আমরা যারপরনাই আনন্দিত সে কথা বুঝতেই পারছেন।
রুদ্র: রাজীব আর আমি আজ তাহলে বিদায় নিই, শ্রোতা বন্ধুরা। নমস্কার ।
রাজীব: নমস্কার । ...
স্বর্ণালী: নমস্কার শ্রোতাবন্ধুরা, "গল্প-কথার আসর"-এর আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য অজস্র ধন্যবাদ । আমি স্বর্ণালী সান্যাল। । আরম্ভ করছি "গল্পকথার আসর"-এ আমার প্রথম পাঠ, আশাপূর্ণা দেবীর গল্প — “বন্দিনী”।