Rajib and Rudra close the sixth season of the podcast, with a few remarks about the season, and a promise to be back early in 2026 with the seventh. Episode 542 of Season Six.
রাজীব: খেলার ছলে ষষ্ঠী চরণ হাতি লোফেন যখন তখন -
রুদ্র: বাবা, হঠাৎ করে সুকুমার রায়? ষষ্ঠী চরণের হাতি? ব্যাপারটা কি?
রাজীব: না মানে চারিদিকে চেয়ে মনে হচ্ছে জগৎ টা যেন ষষ্ঠী চরণের দলে ছেয়ে গেছে, বুঝলি। তাদের কেউ রোখার নেই, তারা যা ইচ্ছে করছে, হাতি পর্যন্ত খেলার ছলে লুফছে যখন তখন..
রুদ্র: একটা সমান্তরাল চোখে পড়ছে বটে, আর ষষ্ঠী চরণের মতোই তারা শুধু প্রদর্শনী তেই ব্যাস্ত, ষষ্ঠীর উচ্চতা টা মনে আছে তো? ওই ক্ষুদ্রতা কে ঢাকা দিতেই হয়তো হাতি লোফার প্রদর্শনী। আবার এ কথাও তো সত্যি হতে পারে যে পালোয়ান ষষ্ঠীচরণ, যিনি ধুম্সো কাঠের তক্তা অবহেলায় ছেঁড়েন, যাঁর হাঁকে কাঁপতে থাকে দালান বাড়ী, আর গুন্ডা যাঁকে বাঁশ বাগিয়ে মেরেও সুবিধা করতে পারে না, আসলে হয়তো সমাজের বন্ধু, সকলকে সাহায্য করার জ্ন্যই যাঁর অমিতশক্তি নিয়োজিত । কিন্তু যাদের সাহায্যার্থে করা, তাদের মতামত না নিয়ে, তাদের বোঝার এবং বোঝানোর চেষ্টা না করে, কি সত্যি সব মানুষের বা বৃহত্তর সমাজের ভালো করা যায় ?
রাজীব: যায় না তো । এক-একজন শক্তিধারী ষষ্টীচরণ যখন সমাজের অনেকদিনের সম্পদ, অনেকদিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা নিয়ে লোফালুফি আরম্ভ করেন, তার উদ্দেশ্য যদি বা প্রাথমিক ভাবে ভালোও হয়, তাতে আখেরে কিন্তু বিঘ্ন আর ঐক্যনাশই হয় । - শ্রোতাবন্ধুরা, সুকুমার রায় যে কি গভীর মননের মানুষ ছিলেন এই সব ছড়ার গভীরে না গেলে বোঝা যায় না। আপাত রসিকতার গভীরে অতলান্ত এক সার্বিক সত্য কে তুলে ধরা চাট্টি খানি কথা নয়।
রুদ্র: নয়ই তো। আর তাই আমরাও আমাদের ষষ্ঠ সিজনের দাঁড়ি টানছি এই এপিসোড দিয়ে যার নাম দিয়েছি ষষ্ঠীর সমাপন। - অবশ্য জগৎ জুড়ে যেসব ষষ্ঠীচরণের দাপাদাপি এখন শুরু হয়েছে, খুব শীগগিরি তার সমাপন হবে বলে মনে হচ্ছে না । তাই এই নামকরণ বলতে পারেন, আমাদের আশা, প্রার্থনা - আর ভবিষ্যৎবাণীও বটে, কারণ ইতিহাস বলছে, "জানি তারো পথ দিয়ে বয়ে যাবে কাল, / কোথায় ভাসায়ে দেবে সাম্রাজ্যের দেশবেড়া জাল" ।
রাজীব: তা তো বটেই । মানুষের ইতিহাসও তার চার পাশ দিয়ে বয়ে তাকে পেরিয়ে চলে যাবে । একটাই ভয় যে Ozymandias-এর মতোই, তার কাছেপিঠের জায়গা তার দাপটে যেন মরুভূমি না হয়ে যায় । - শ্রোতাবন্ধুরা, গল্পকথার আসরের ষষ্ঠ সীজনের সমাপ্তির বৈঠকে যোগদান করার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ । আমি রাজীব ঘোষ ।
রুদ্র: আর আমি রুদ্র দত্ত । - প্রতি বছরের মতো এইবারও, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি, আমাদের একটু বিরতি নেবার পালা ।
রাজীব: ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অর্থাৎ মন কে নিয়ন্ত্রন করবো এইরকম একটা উদ্দেশ্য নিয়ে বিরতি নেব কিছুদিন। তারপর ফিরে আসবো আপনাদের কাছে জানুয়ারীর শেষে বা ফেব্রুয়ারীর গোড়ায়, সপ্তম সীজন আরম্ভ করতে ।
রুদ্র: সপ্তম সীজনের কি পরিকল্পনা তা সপ্তম সীজনের গোড়াতেই আলোচনা করবো - কেবল একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না । শ্রোতাবন্ধুরা জানেন, আমরা অনন্যা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর লেখা এই পডকাস্টে আগে পাঠ করেছি । আগামী বছর, ২০২৬ সাল, তাঁর জন্মশতবার্ষিকী । আগামী ১৪ই জানুয়ারী তাঁর জন্মের শততম জয়ন্তী ।
রাজীব: এই উপলক্ষে, আমাদের সপ্তম সীজনের একদম গোড়ার দিকেই, আমরা পাঠ করবো মহাশ্বেতা দেবীর সবথেকে প্রখ্যাত সৃষ্টি, "হাজার চুরাশি-র মা" । নকশাল আন্দোলনের অব্যবহিত পরের যুগের একটি জ্বলন্ত, জীবন্ত চিত্র আঁকা আছে এই উপন্যাসে । আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে, শ্রোতাবন্ধুরা ।
রুদ্র: বিদায় নেবার আগে এই কথাও বলে নিই, আমরা এই পডকাস্টে যেসব সাহিত্যিকের লেখা পাঠ করছি, অন্য সীজনের মতো এই সীজনেও, তা র পরিধি আমরা বাড়িয়ে চলেছি । এই সীজনে রাজীব আপনাদের সঙ্গে এই পডকাস্টে প্রথম বারের জন্য পরিচয় করিয়ে দিয়েছে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ ঘোষ, মতি নন্দী, আর প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ।
রাজীব: রুদ্র আপনাদের কাছে প্রথমবারের মতো নিয়ে এসেছে জগদানন্দ রায়, বেগম রোকেয়া, এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়, আর রমানাথ রায়কে ।
রুদ্র: আর মহাশ্বেতা আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছে রবীন্দ্রসঙ্গধন্যা মৈত্রেয়ী দেবীকে, তাঁর স্মৃতিকথন "মংপু-তে রবীন্দ্রনাথ"-এর সুললিত পাঠের মাধ্যমে । মোট ছাপ্পান্নজন সাহিত্যিকের লেখা বর্তমানে আমাদের পডকাস্টে রয়েছে ।
রাজীব: কিছু কিছু জিনিষ শেষ হতে বাধ্য । বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্তকে আমরা বিদায় জানিয়েছি এই পর্বে, কমলাকন্তের শেষ কয়েকটি পত্র আর একটি নাটক পাঠ সম্পূর্ণ করে ।
রুদ্র: আবার কিছু কিছু জিনিষের আরম্ভও আছে - আমরা প্রথমবারের জন্য নিয়ে এসেছি প্রেমেন্দ্র মিত্রের পরাশর বর্মা, আর মেজকর্তা, এই দুই অভিনব চরিত্রকে, আর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের তপনকেও । আর কিছু বিলম্বিত হলেও, আমরা আমাদের পডকাস্টের কাব্যে রচিত গল্পকাহিনীর পাঠ আরম্ভ করে দিতে পেরেছি এই সীজনে ।
রাজীব: এবং অতি আনন্দের কথা, এই সেদিন আমরা আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছি স্বর্ণালীর, আমাদের আসরের নবতম কথককে । সপ্তম পর্বে তার নতুন কণ্ঠস্বর আমাদের পডকাস্টকে আপনাদের কাছে আরো সমৃদ্ধ করবে, আশা রাখি । - আর কি কিছু বাকি রইলো, রুদ্র ?
রুদ্র: কিছুই না, কেবল একবার মনে করিয়ে দিতে পারি যে প্রতিবারের মতো এবারও আমরা শীতের ছুটির দিনগুলোর জন্য শ্রোতাবন্ধুদের কাছে রেখে যাচ্ছি কয়েকটি শ্রুতিপুস্তক - আর এই আশা, যে নতুন বছরে আবার আপনারা আমাদের কাছে ফিরে আসবেন ।
রাজীব: আজ তাহলে বিদায়, শ্রোতাবন্ধুরা, দেখা হবে আবার নতুন বছরে । সবাই ভালো থাকবেন, শীতের ছুটি আনন্দে কাটাবেন । নমস্কার ।
রুদ্র: নমস্কার ।