Rajib and Rudra discuss copyright issues and the relation of Indian Copyright Law with non-commercial use, recap the podcast's goals and ideals, and connect them to hopes and plans for the Fourth Season. Released February 18th, 2023. Episode 253 of Season Four.
রাজীব: নমস্কার শ্রোতা বন্ধুরা। গল্পকথা র আসরের নতুন বছরের প্রথম অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগত জানাই। আমি রাজীব ঘোষ।
রুদ্র: আর আমি রুদ্র দত্ত। আপনাদের সবাইকে নতুন বছরের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাদের বৈঠক শুরু করছি।
রাজীব: বছরটা যদিও নতুন আর ঠিক নেই। দেখতে দেখতে মাস দুই অন্তর্হিত হয়েছে।
রুদ্র: তা হয়েছে, কিন্তু শ্রোতা বন্ধুদের সাথে এটাই আমাদের এ বছরের প্রথম মোলাকাত, কাজেই সুপ্রভাত বলার মতই শুভ নববর্ষ বলা যেতেই পারে!
রাজীব: (laughter) 2022 এর শেষে যখন কিছুদিনের জন্যে বিদায় নিয়েছিলাম, তখন জানিয়েছিলাম যে আপনাদের জন্যে তিনটি উপন্যাস প্রকাশ করে তবে কিছু দিনের জন্যে ছুটি নিচ্ছি। আশা করছি তার মধ্যে কয়েকটি হয়ত আপনারা ইতিমধ্যে শুনেছেন বা শুনছেন। কেমন লাগলো বা লাগছে অবশ্য ই জানাবেন। এই যোগসূত্র টা কিন্তু খুব প্রয়োজন আমাদের পক্ষে।
রুদ্র: কোন তিনটি উপন্যাস - সেগুলো আর একবার মনে করিয়ে দে শ্রোতা বন্ধুদের? কি বলিস?
রাজীব: উত্তম প্রস্তাব। শ্রোতা বন্ধুরা, শীতের ছুটির আগে আমরা প্রকাশ করেছি তিনটি শ্রুতি পুস্তক, হেমেন্দ্র কুমার রায় এর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস যকের ধন, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস তুমি সন্ধ্যার মেঘ আর লীলা মজুমদার এর মর্মস্পর্শী উপন্যাস পাখী।
রুদ্র: এইবারে চতুর্থ সিজন-এর কথায় আসি। চতুর্থ সিজন-এর জন্যে কাজ করতে গিয়ে আমরা একটু অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছিলাম। কিছুটা আত্ম বিস্মলেশন ও বলতে পারেন, করছিলাম আমরা। কেন আমরা এই পডকাস্ট করি, আমাদের এই গল্পপাঠের পডকাস্ট আর পাঁচটা গল্পঃ পাঠের পডকাস্ট বা ইউটিউব চ্যানেলের অনুষ্ঠান থেকে কি ভাবে স্বতন্ত্র বা আদৌ স্বতন্ত্র কি না, তাই নিয়েই ছিল আমাদের এই বিচার বিশ্লেষণ।
রাজীব: অন্য অনেক উদ্যোগের থেকে আমাদের এই পডকাস্টের একটা তফাৎ তো আছেই - সেটা উদ্দেশ্যের । প্রথম থেকেই, কোনো বাণিজ্যিক বা আর্থিক উদ্দেশ্য আমাদের ছিলো না - এখনও নেই । আর তাই, নিজেদের আরো বেশী দৃষ্টিগোচর বা visible করে তোলারও আমাদের কোনো বিশেষ প্রয়োজন, বা চেষ্টা, ছিলো না ।
রুদ্র: কিন্তু সে তো আমাদের নিজেদের দিক থেকে । আমাদের শ্রোতাবন্ধুদের দিক থেকে এই তফাতটুকু তো চোখে না পড়তেই পারে - কারণ এইযুগে ইউটিউব, স্পটিফাই, বা অন্য বড় বড় আন্তর্জালিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান এইধরণের commercialization বা বাণিজ্যিকীকরণ এতটাই সহজ করে ফেলেছেন, যে শ্রোতা বা দর্শকদের তা নজরেই পড়ে না, কোনো টাকা-পয়সার লেনদেনও প্রয়োজন হয় না, শ্রোতা-দর্শকেরা মূল্য হিসেবে নিজেদের সময় এবং মনোযোগটাই দিয়ে থাকেন, প্রায় নিজেদের অগোচরেই । তাহলে শ্রোতাবন্ধুদের কাছে আর পাঁচটা উদ্যোগের থেকে গল্প-কথার আসরের কোনো ভিন্ন মূল্য থাকার কোনো সম্ভাবনা আছে কি ?
রাজীব: এই আলোচনা করতে গিয়ে আমরা উপলব্ধি করলাম যে অন্যদের উদ্যোগ আর আমাদের এই পডকাস্ট এর পিছনে আমাদের উদ্দেশ্য টাই একমাত্র ফারাক নয়। আপনাদের আবার মনে করিয়ে দি যে আমরা বাংলা সাহিত্যের একটা শ্রুতি সংরক্ষণ এর কাজ করব এইরকম একটা চিন্তা থেকেই এই পডকাস্ট এর জন্ম হয়েছিল। তার মানে, অন্ততঃ একদিক থেকে আমাদের পডকাস্টে শ্রোতাবন্ধুরা নিশ্চয়ই কিছুটা স্বাতন্ত্র্য পেয়েছেন - কারণ এই সংরক্ষণ এর চিন্তাটা থাকার ফলে আমাদের গল্প চয়ন অন্য অনেক উদ্যোগের থেকে অবশ্যই একটু আলাদা রকমের ।
রুদ্র: অধুনা কালের যেসব সাহিত্য বর্তমানে সুপ্রচলিত, এবং বহুল পঠিত, আমরা তার থেকে ইচ্ছে করেই একটু দূরে থেকেছি - তার পরিবর্তে শ্রোতাবন্ধুরা আমাদের কাছে পেয়েছেন এমন সব গল্প, যা হয়তো তাঁদের পূর্বপরিচিত নয়, বা স্বল্পপরিচিত । বাংলা সাহিত্যের গত শতাধিক বছরের বর্ণাঢ্য বৈচিত্রের যে অংশগুলির সঙ্গে প্রাত্যহিক যোগাযোগ ঘটে না - অন্ততঃ ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের নিজেদের - তার সঙ্গে যোগস্থাপন করার চেষ্টা করেছি । আচার্য জ্গদীশচন্দ্র বসুর লেখা বৈজ্ঞানিক প্রহসনের গল্প পাঠ করেছি, আবার বিমল করের ধার্মিকবেশী প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযানের গল্প পাঠ করেছি ।
রাজীব: কিন্তু এই কাজটা করতে গিয়ে আমরা দেখলাম যে আরো অনেক কিছু করা যেতে পরে যেটা আর যারা গল্পপাঠের পডকাস্ট বা চ্যানেল করছেন তারা সেইভাবে করেন নি বা ভাবেন নি। আমাদের পড়া অধিকাংশ গল্পের সাথেই আমাদের কোন না কোন পাঠ্য স্মৃতি লুকিয়ে আছে। গল্পগুলি অতীতে কোথাও না কোথাও কোন ভাবে আমাদের হৃদয় কে স্পর্শ করেছে।
রুদ্র: সেই অভিজ্ঞতা গুলো আমাদের নিজস্ব কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি স্থান বিশেষে সেই গুলিতে আপনাদেরও অংশীদার করে নেবার। অনেক গল্পের পেছনে থেকে গেছে অজানা গল্প - গল্পবিশেষে সে গুলিও আপনাদের কাছে আমরা হাজির করেছি।
রাজীব: সর্বোপরি, আমরা চেষ্টা করি প্রতি সিজন নতুন নতুন আঙ্গিকে তৈরি করতে যাতে আমাদের গল্পের রচয়িতা বা বিষয় চয়নে, দৈর্ঘ্যের বৈচিত্র্যে নতুন চিন্তা ও ভাবনার প্রকাশ থাকে, একঘেয়েমি না আসে শ্রোতা দের।
রুদ্র: যেমন ধরুন, তৃতীয় সিজনে, আমরা ঠিক করেছিলাম যে এমন কিছু বিখ্যাত সাহিত্যিক এর রচনা কে পেশ করব, যুগের অনিবার্য নিয়মে যারা হয়ত কিছুটা মৃয়মান হয়ে পড়েছেন বর্তমান পাঠকদের কাছে।
রাজীব: আরো আগে, দ্বিতীয় সিজনে আমাদের লক্ষ্য ছিল, নারী সাহিত্যিক দের রচনা কে নারী পাঠক এর কণ্ঠে নিয়ে আসা এই পডকাস্ট এ।
রুদ্র: প্রথম সীজনে অবশ্য কোনোরকমে আরম্ভ করার চিন্তাটাই বড় ছিলো । [Both laugh] আর অতীতের সবচেয়ে প্রিয় গল্পগুলির কাছে ফিরে যাওয়ারও একটা উদ্দেশ্য ছিলো । … তাহলে এই পর্বে কি ভাবছিস রাজীব?
রাজীব: এই পর্বে আমরা কথকেরা একটু স্বকীয় ভাবে ভাবে সাজাতে পারি আমাদের পরিবেশনা।
রুদ্র: বেশ, ভালো কথা, তোর ভাবনার কথা বল তাহলে।
রাজীব: সংস্কৃতে নবরসের কথা তো আমরা সবাই জানি। ভারতীয় শিল্পে, নৃত্যে এই নব রসের প্রকাশ তো দেখি। সাহিত্যে ও তার প্রকাশ আছে ।
রুদ্র: অবশ্যই আছে ।
রাজীব: আমরা আমাদের গত তিন সিজনে যে সব ছোট বড় গল্প পড়েছি তাদের মধ্যে এই নব রসের ভিন্ন ভিন্ন রস প্রকাশ পেয়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমরা খুব সচেতন ভাবে সেই রস আহরণ করতে যাই নি বা শ্রোতা দের কাছে তার ব্যাখ্যা করার ও চেষ্টা করি নি। গল্পের অনিবার্য নিয়মে ভিন্ন ভিন্ন রস প্রকাশ পেয়েছে কিছুটা অবচেতন ভাবেই। এই সিজনে তাই আমার ইচ্ছা নব রসের এক একটি রস কে মুখ্য করে যে কাহিনী সেই সব কাহিনীর থেকে চয়ন করে গল্পগুলি কে শ্রোতা বন্ধু দের কাছে নিবেদন করতে। এটা একটা পরীক্ষা ও বলতে পারিস আবার কিছুটা নিজের শিক্ষাও বলতে পারিস।
রুদ্র: বাঃ, বাঃ, অভিনব প্রস্তাব। আমাদের এই পডকাস্ট তো একটা নতুন আঙ্গিকের পরিক্ষাভূমি ও বটে।
রাজীব: একদম খাঁটি কথা।
রুদ্র: তবে রাজীব, নাচে যেমন তুই একটা একক রসের অভিনয় দেখতে পারিস, সাহিত্য তো একক রসভিত্তিক্ না হতেই পারে। বরং না হওয়াটাই ত স্বাভাবিক, তাই না?
রাজীব: সেটাও ঠিক। আমার উদ্দেশ্য হল, মূল রস টি কে খোঁজা । অন্য রস তো থাকবেই।
রুদ্র: তাহলে এই সিজনে তুই কি কিছু নতুন সাহিত্যিক কে শ্রোতা দের কাছে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছিস?
রাজীব: হ্যাঁ, নতুন মানে, তাঁদের লেখা আগের তিন সিজনে পড়া হয় নি। আসলে বিপুলা এ ধরণীর কতটুকু জানি র মতই, সুবিস্তৃত বাংলা সাহিত্য সাগরের শেষ পাওয়া মুশকিল। এটা করতে গিয়ে কিছু সন্ধান, আবিষ্কার, পড়াশোনা সবই করতে হয়েছে। এবং হবে বছর জুড়ে। এটাই আমার শিক্ষাভূমি। কিছু গল্প এমন থাকবে যেগুলি আগে পড়া নয়, নতুন আবিষ্কার। আমাদের এই মধ্য বয়সে এসে বাংলা সাহিত্যের মনিভান্ডারের মধ্যে এই আবিষ্কার গুলি খুব নাড়া দেয়, প্রভাবিত করে, ভাবায়।
রুদ্র: এই কথাটা বড় খাঁটি । আমরা পডকাস্ট আরম্ভ করেছিলাম অনেকটা এই উদ্দেশ্য নিয়েও - আমরা দুজনেই প্রযুক্তিবিদ্যার ছাত্র, গল্প-কবিতা-নাটক নিয়ে ছাত্রজীবন থেকেই উৎসাহ থাকলেও, বাংলা সাহিত্যের, এবং সেই সঙ্গে সংস্কৃতি আর ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয়টা নিজের উৎসাহে, এবং বাবা-মা-দাদা-দিদির সাহায্যে আমাদের যা যতটুকু হয়েছে । তাতে ফাঁক প্রচুর । কিন্তু সময়-সুযোগ পেলেই, আমাদের শিক্ষা-দীক্ষার সেই ফাঁকগুলো ভরানোর চেষ্টা না করার কোনো কারণই নেই । তাই আমরা পরিচিত গল্পের পাশাপাশি অচেনা গল্পও পাঠ করার চেষ্টা প্রথম থেকেই করে যাচ্ছি ।
রাজীব: আর শুধু তাই না, এই চেষ্টার সূত্রে যদি লেখক বা লেখিকার সম্বন্ধে নতুন কিছু শিখতে পারি, তাও শ্রোতাবন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছি । আমাদের কোনো কোনো এপিসোডে এইরকম একটু ক্ষুদ্র লেখক পরিচিতি অন্তর্ভুক্ত আছে । সেই এপিসোডগুলি বিশেষভাবে চিহ্নিত আছে আমাদের ওয়েবসাইটে - Episode Guide by Content এই পেজটিতে । আমরা চেষ্টায় আছি, এই ধরণের পরিচিতিগুলি, আর আমাদের কথোপকথনগুলি, লিখিত আকারে আমাদের ওয়েবসাইটে রাখা - আপনারা যাতে চাইলে শোনার বদলে পড়তেও পারেন ।
রুদ্র: আমাদের জ্ঞান অতি স্বল্প, কিন্তু সেটুকুও শ্রোতাবন্ধুদের কাছে উপস্থিত করতে আমাদের কোনো সংকোচ নেই; আমরা তো সবাই শিখেছি, জ্ঞানধন যত দান করা যায়, তত বেড়ে যায় । আর আমরা জানি, আমাদের শ্রোতাবন্ধুদের মধ্যেও অনেকেরই আমাদের মতোই অবস্থা - আমাদের বাঙালী সাহিত্য-সংস্কৃতি-ধারার প্রতি আমাদের তৃষ্ণা যতটা ছিলো, জীবনযুদ্ধে পড়ে তা মেটাবার সম্পূর্ণ সুযোগ ঘটেনি । শ্রোতাবন্ধুদের মধ্যে যারা আমাদের ই-মেইল বা অন্য কোনো মাধ্যমে এই বিষয়ে তাঁদের সমর্থন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁদের অসংখ্য, অসংখ্য ধন্যবাদ ।
রাজীব: আর সেই চেষ্টাটাই আরো জোরদার করাটাই এই চতুর্থ পর্বে আমার গল্প চয়নের পিছনে প্রধান চিন্তা থাকবে । ... এবার তুই বল, রুদ্র, তুই কি ভাবছিস, চতুর্থ পর্ব নিয়ে ।
রুদ্র: আমি কি ভাবছি তা বলার আগে, ভাবনাটা কোথা থেকে এলো, তা বলে নিলে সুবিধা হয় বোধহয় । মজার কথা, এই চিন্তাটার শুরু কিন্তু একটি অপ্রিয় ঘটনা থেকে - যার বিষয়ে আপনারা আগেই শুনেছেন । শ্রোতাবন্ধুরা জানেন, কেউ বা কারা অর্থহীন অভিযোগ করে স্পটিফাই থেকে আমাদের পডকাস্ট সরিয়ে দিয়েছেন । তৃতীয় পর্বের শেষে আমরা এই বিষয়ে শ্রোতাদের জানিয়েছি - আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও একটি বিজ্ঞপ্তি রেখেছি । যদিও নালিশ-করনেওয়ালার ই-মেইল অ্যাড্রেসে আজকের যুগের সবথেকে সফল এবং বড় বাংলা প্রকাশন প্রতিষ্ঠানের নাম আছে, আমাদের পডকাস্টের বিরুদ্ধে বিদ্বেষটা ঠিক কোথা থেকে আসছে, তা নিয়ে আমাদের একটু সংশয় আছে ।
রাজীব: কারণ আমাদের পডকাস্টে তো কোনো বই প্রকাশন প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই । একে তো আমাদের অতি ছোট্ট উদ্যোগ - যত মানুষ বাংলা বই কেনেন, আমাদের পডকাস্ট শুনছেন তার লক্ষজনের মধ্যে হয়তো একজন । আর যাঁরা বই কেনেন, তাঁরা একবার গল্পটা শোনা হয়ে গেলো বলে বই কিনলেন না, এরকম হয় না - অনেকের অনেক গবেষণা তাই প্রমাণ করেছে । বরং শ্রুতি, নাটক, বা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কোনো গল্পের সম্বন্ধে অবগত হলে, সেই বই অনেকে তারপর কিনে রাখতে পছন্দ করেন, এটাই বরং ঘটে থাকে । তাই মনে হয়, হয়তো আসলে অভিযোগটা এমন কোনো জায়গা থেকে এসেছে, যাঁরা নিজেরাও এই গল্পগুলি পাঠ করতে উৎসাহিত, এবং হয়তো তার থেকে বাণিজ্যিক লাভও করতে চান । তবে আমরা আসলে এই নিয়ে কিছুই ঠিক করে জানি না, এ সবই আমাদের অনুমান ।
রুদ্র: বাণিজ্যিক লাভ করার কথা ভাবলে অবশ্যই কপিরাইট আর রয়ালটির কথা এসে যায় । আমরা যে গল্পগুলি পড়ছি, সেগুলোর অনেকগুলিরই বর্তমানে কপিরাইট নেই - লেখক বা লেখিকা পরলোকগত, তাঁদের পরিবার, প্রকাশক, বা এজেন্টও কপিরাইট রাখার চেষ্টা করেননি - কিংবা আইনমতে কপিরাইট সর্বাধিক যতদিন ধরে রাখা যায়, তা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে ।
রাজীব: কয়েকটি উদাহরণ দিলে হয়তো পরিষ্কার হবে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরশুরাম, প্রমুখ লেখকদের মৃত্যুর পরে যথেষ্ট সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, যে তাঁদের লেখার কপিরাইট আর নেই । সত্যজিৎ রায়ের সমস্ত লেখার কপিরাইট "দ্য রে সোসাইটি" নামক একটি প্রতিষ্ঠানের, যার পুরোধায় আছেন সত্যজিৎ-তনয় সন্দীপ রায় । শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার কপিরাইট বর্তমানে তাঁর পরিবারের সম্পত্তি ।
রুদ্র: কিন্তু কপিরাইট মানে কি ? কোনো লেখার কপিরাইট যদি থাকে, সেই কপিরাইটের ধারকের অনুমতি ছাড়া সেই লেখা ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা বেআইনী । কিন্তু কোনো লিখিত সাহিত্যসৃষ্টির শ্রবণযোগ্য পাঠ করা, এবং সেই পাঠ শ্রোতাদের মধ্যে বিতরণ করা, কপিরাইট আইন বিরুদ্ধ নয় ! ভারতীয় আইনধারায় এই কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা আছে - অবশ্য এটাও বলা আছে যে সেই পাঠ অপেশাদারী পাঠকের হতে হবে, তা অর্থের বিনিময়ে বিতরণ করলে চলবে না । ভারত সরকার প্রকাশিত "A HAND BOOK OF COPYRIGHT LAW"-তে কোন কোন ধরণের কাজে কপিরাইট ধারকের অনুমতি প্রয়োজন লাগে না, তার তালিকায় চার নম্বর হিসেবে এই কথা পরিষ্কার বলা আছে ।
রাজীব: অবশ্য আমরা যদি এই পডকাস্টের জন্য শ্রোতাদের কাছ থেকে কোনো পয়সা নিতাম, তাহলে আইনতঃ হোক বা না হোক, অন্ততঃ নৈতিক ভাবে তার একাংশ রয়ালটি হিসেবে কপিরাইট ধারকের প্রাপ্য হতো । কিন্তু আমরা তো তা নিচ্ছি না, তাই এই অংশভাগেরও কোনো প্রশ্ন উঠছে না ।
রুদ্র: যাঁরা এই বিষয়ে আরো জানতে চান, তাঁদের অনুরোধ করি ভারত সরকারের বাণিজ্য এবং উদ্যোগ মন্ত্রালয় অর্থাৎ Ministry of Commerce and Industry থেকে প্রকাশিত এই হ্যান্ডবুকটি সংগ্রহ করুন - আন্তর্জালে বিনামূল্যে পাবেন ।
রাজীব: কাজেই এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই, যে আমাদের পডকাস্ট কোনো কপিরাইট লঙ্ঘন করছে না । - আর আরো অদ্ভুত কথা এই যে, আন্তর্জালের বহু জায়গায় বহু পাঠ বা আবৃত্তি রয়েছে, তা নিয়ে সাধারণতঃ কেউ কোনো আপত্তি তোলেন না, এমনকি তাদের মধ্যে যেগুলি বিজ্ঞাপন-সমৃদ্ধ পেশাদারী সম্পাদন, সেগুলি নিয়েও নয় । সত্যিই, অবাক হবার মতো ব্যাপার নয় কি ?
রুদ্র: আমাদের অবাক হবার আর একটু বাকি ছিলো । আপনারা অনেকেই একাধিকবার আমাদের বলেছেন, আমাদের পডকাস্ট ইউটিউবে শুনতে পেলে আপনাদের ভালো লাগবে । অতি সম্প্রতি, শ্রোতাবন্ধুদের একজন খুশী হয়ে জানালেন, আমাদের পডকাস্ট ইউটিউবে খুঁজে পেয়েছেন ।
রাজীব: আমরা তো অবাক, কারণ আমরা তো ইউটিউবে আমাদের পডকাস্ট দিইনি - অনেকদিন ধরেই দেবার কথা ভেবেছি, কিন্তু অনেক কাজের ফাঁকে এখনো সময় করে উঠতে পারিনি । তাহলে ...? শ্রোতাবন্ধুর দেওয়া লিঙ্কটি ব্যবহার করে আমরাও তা খুঁজে পেলাম । সত্যিই, আমাদেরই প্রথম সীজনের কয়েকটি এপিসোডে, কিছু ছবি সংযোজন করে, ইউটিউবে তুলে দিয়েছেন কেউ বা কারা !
রুদ্র: মজার কথা এই যে, কপিরাইট আইন অনুযায়ী আমাদের নিজস্ব পাঠগুলির কিন্তু সত্যিই কপিরাইট আছে, এবং সে কপিরাইট আমাদের নিজেদের । কাজেই এই নিয়ে আমরা অভিযোগ করতেই পারি । আমরা অবশ্য অভিযোগ বা মামলা কিছু না করার কথাই ভাবছি, কিন্তু শ্রোতাবন্ধুরা, আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে আর একটা কথা - আমাদের পাঠ নিয়ে এইরকম কোনো ব্যবহার তো আমাদের না জানিয়ে কেউ করতেই পারেন - এবং তার বাণিজ্যিকীকরণ অর্থাৎ commercialization -ও করতে পারেন । তাতে আপনাদের মনে হতেই পারে, যে আমরা বারবার যে বলছি আমরা অপেশাদারী, আমরা এই পাঠের থেকে কোনো আর্থিক উপার্জন করছি না - সে কথাটা মিথ্যা ।
রাজীব: তাই বারবার আপনাদের মনে করিয়ে দিই, শ্রোতাবন্ধুরা, আমাদের ওয়েবসাইট গল্পকথার আসর ড্ট অর্গ - যার উল্লেখ আমাদের প্রতিটি এপিসোডের শেষে থাকে, এবং থাকবে । সন্দেহ হলেই এই ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখে নেবেন - আমরা যাই করি, এইখানে তার উল্লেখ থাকবে, লিঙ্ক থাকবে ।
রুদ্র: আর আপনাদের সুবিধার জন্য, আমরা আমাদের প্রথম থেকে সমস্ত এপিসোড আমরা শিগগিরি ইউটিউবে তোলার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো । আমাদের পডকাস্টের অন্য সমস্ত মাধ্যমের মতোই, এর থেকেও আমরা কোন উপার্জন করার চেষ্টা করবো না । বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ রাখতে পারাটাই আমাদের পাথেয় - আর আপনাদের উৎসাহদান ।
রাজীব: ... সত্যিই, মজার কথাই বটে; আমাদের বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগ, আর একই সঙ্গে আমাদের নিজেদের কপিরাইট লঙ্ঘন ! মজার ... কিংবা দুঃখের কথা বললেও ভুল হয় না বটে [laughs] ... কিন্তু রুদ্র, এর সঙ্গে তোর চতুর্থ সীজনের পাঠ পরিকল্পনার কি সম্পর্ক ?
রুদ্র: হ্যাঁ, এবার সেই কথায় আসি । আসলে অনেক দিন ধরেই একটা কথা মনে আসছে, সেটা এইসব ঘটনার ফলে বিশেষভাবে মনে এলো । কথাটা হলো এই যে, আমরা যাকে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি বা intellectual property বলি, তার তো অনেক দিক আছে । এই ভাবাদর্শ কিন্তু মানুষের ইতিহাসে খুব পুরনো নয় - গত হাজার দুʼহাজার বছরেই এর প্রচলন । বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, বা কম্পিউটার প্রোগ্রাম, এইসব সম্পর্কে তো এই ভাবাদর্শ খুবই প্রযোজ্য, এবং প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে আধুনিক যুগে । সাহিত্য বা সংস্কৃতি নিয়েও এই ভাবাদর্শ প্রচলিত, এবং সেও ওই গত হাজার দুʼহাজার বছরেই । কিন্তু তার বাণিজ্যিকীকরণ প্রধানতঃ আধুনিক যুগের ব্যাপার ।
রাজীব: হ্যাঁ, সেই থেকেই তো সাহিত্য বা সঙ্গীতের কপিরাইটের প্রচলন, বা রয়ালটি দেবার প্রথা । বুদ্ধিবৃত্তিক কাজও কাজ, এবং সেটা যে করে তারও জীবিকার প্রয়োজন, এই ধারণাটা বোধহয় ওই সময় থেকেই চালু । তার আগে, মধ্যযুগে, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজগুলি বোধহয় প্রধানতঃ সচ্ছল ব্যক্তিরা নিজেদের খরচেই করতেন, আর সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার নাম জড়িয়ে রাখার ব্যাপারটা বোধহয় প্রধানতঃ সম্মান বা যশের খোঁজে ছিলো - আর্থিক কারণে নয় ।
রুদ্র: ইতিহাস এবং অর্থনীতির বিবর্তন সম্পর্কে যেটুকু জানি, তাতে আমারও তাই মনে হয় । আর এই প্রসঙ্গেই মনে হয়, প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মানসিকতায় ঐতিহাসিক সময়ে একটা তফাৎ হয়তো ছিলো । নিজের সৃষ্টির সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়ে রাখার আকাঙ্খা প্রাচ্যে একটু যেন কম ছিলো, বা তার সম্বন্ধে খেয়ালটাও যেন কম ছিলো । সেইজন্যই, অতি সুপ্রাচীন সাহিত্যের স্রষ্টাদের নাম ইতিহাসের গর্ভে হারিয়ে গেছে - কিংবা শুধু একটা নাম হিসেবেই টিকে রয়েছে, যে নামে আসলে কোনো একজন মানুষ ছিলো কি না তাই সন্দেহের কথা । সারা পৃথিবীতেই তাই । তারপর মধ্যযুগে পাশ্চাত্যে যখন সৃষ্টিতে স্রষ্টার স্বাক্ষর রাখার প্রথা সুপ্রচলিত হলো, তারপরেও কিছু শতাব্দী ধরে প্রাচ্যে তার প্রতি মনোযোগ একটু কম ছিলো । তাইজন্যই বোধহয়, বিজ্ঞানের বা গণিতের অনেক আবিষ্কার প্রাচ্যে আগে ঘটলেও, তার প্রচলিত নামকরণে পাশ্চাত্যের স্বাক্ষর - যেমন পিথাগোরাসের সূত্র বলে আমরা যেটাকে জানি, তা পিথাগোরাসের কয়েকশো বছর আগে ভারতের বৌধায়ন সূত্রে পাওয়া যায়, এবং তারও হাজার বছর আগে মিশরের প্যাপিরাসে তার ছোঁওয়া পাওয়া যায় - কিন্তু তার কোনোটিতেই কোনো বিশেষ আবিষ্কারকের নাম ছিলো না । সূত্রটিকেই প্রধান মনে করে, লিপিকারেরা সেটিকেই লিপিবদ্ধ করেছিলেন - সূত্রের জনকের নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করেননি ।
রাজীব: তাই তো ! মহাভারতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আমরা ব্যাসদেবের নামই জানি । কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বলে কোনো একজন মানুষ যদি থেকেও থাকেন, পাঁচশো বছর ধরে আরো অন্য অনেকের অবদান এই মহাকাব্যে আছে, কিন্তু তাদের কারুর নামই আমরা জানি না । এই প্রসঙ্গে একটা মজার কথা মাথায় এলো - কপিরাইট, আর রয়ালটি, এই দুটি শব্দেরই, ঠিক বাংলা কোনো প্রতিশব্দ নেই । কপিরাইটের বিকল্পে "গ্রন্থস্বত্ব" কথাটি চালু আছে বটে, কিন্তু কপিরাইটের অন্যান্য ব্যবহারে - যেমন সঙ্গীতের ক্ষেত্রে - সেটা খাটে না; আর রয়ালটির তো কোনো প্রতিশব্দই নেই ।
রুদ্র: আর সেই কারণেই মনে হয়, গত দুই শতাব্দীতে বাংলার বহু লেখকই, যখন অন্য কোথাও থেকে কাহিনী সংগ্রহ করেছেন, তখন সেই কাহিনীর মূল স্রষ্টার কথা উল্লেখ করা সব সময়ে প্রয়োজন বোধ করেননি । আসলে গল্পের যে কাঠামো, সেটা কল্পনা করা বা সৃষ্টি করাটাকে বোধহয় বেশীরভাগ বাঙালী সাহিত্যিক প্রধান মনে করতেন না । সাহিত্য কিরকম রচনাশৈলী নিয়ে লিপিবদ্ধ হলো, চরিত্রের সুখদুঃখ লেখক পাঠককে কতটা অনুভব করাতে পারলেন, তার মধ্যেই শিল্পের আসল কৃতিত্ব ছিল বলে তাঁরা হয়তো মনে করতেন । অনেক গল্পই তো ঐতিহাসিক পটভূমিতে রচিত - তার ঘটনাবলীও ইতিহাসভিত্তিক - তার জন্য লেখককে কল্পনাশক্তি খরচ করতে হয়নি একটুও । কিন্তু সেই ঘটনাগুলিকে তাঁরা কিভাবে বর্ণনা করেছেন, কখন কোন চরিত্রের অন্তর্লোক থেকে তা দেখেছেন, এখানেই তাঁদের প্রতিভা । আর খুব কষ্টের বিষয়, এইজন্য আধুনিক যুগের অনেকে এইসব কাহিনী গ্রহণ করাটাকে চুরি করা বলেছেন । অথচ অনেক ক্ষেত্রেই কাহিনীর বিদেশী উৎস গোপন করার কোনো বিশেষ চেষ্টা এইসব লেখকেরা করেননি, এবং তাঁদের সৃষ্টি স্বকীয় মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে - চৌর্যবৃত্তির অপবাদে তাকে ক্ষুণ্ণ করে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি । এই চতুর্থ পর্বে আগে যেরকম পাঠ করে চলেছি, তাই করতে চাই, আর তোর অনুসরণে আরো আরো সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে চাই - কিন্তু একটু খেয়াল রাখবো, এইধরণের গৃহীত কাহিনী থেকে রচিত গল্প পাঠ করার চেষ্টা করবো ।
রাজীব: একটু উদাহরণ দিবি ? ব্যাপারটা নইলে ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না ।
রুদ্র: নিশ্চয়ই । ধরা যাক সুকুমার রায়ের হ-য-ব-র-ল - অনেকেরই সুপরিচিত, কিছুদিন আগে মহাশ্বেতা এই পডকাস্টে পাঠও করেছে । অনেক পাঠকই মনে করেন, যে লুইস ক্যারলের Alice in Wonderland এই কাহিনীর মূল উৎস । কাহিনী দুটিকে একটু তুলনা করলে এ কথা তো নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সুকুমার Alice পড়েছিলেন, এবং হ-য-ব-র-ল লেখার সময়ে সেই কাহিনী সুকুমারকে প্রভাবিত করেছিলো । আজকের দিন হলে অতি অবশ্য পাদটীকা লিখে দিতে হতো, যে এই গল্পটি বিদেশী একটি গল্পের ছায়াবলম্বনে রচিত । সুকুমার যখন লিখেছিলেন, তখন সেরকম লেখার প্রথা ছিলো না - এবং সুকুমার এরকম কোনো ভাষ্য লিখেছিলেন বলে জানা যায়না । কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, তার পরিণতি এমন একটি গল্প, যেটা বস্তুতঃ একটি মৌলিক সৃষ্টি - ভাষা, আঙ্গিক, অলঙ্কারে একটি খাঁটি বাঙালী গল্প - কাকেশ্বর, ব্যাকরণ শিং, ন্যাড়া, উদো-বুধো, এরা আমাদের খুব পরিচিত কাছের মানুষ - কোনো ইংরেজী কাল্পনিক চরিত্রের নকল নয় । সাহিত্যকীর্তি হিসেবে সেটি বাংলার একটি রত্ন ।
রাজীব: বুঝেছি । যেমন অবনীন্দ্রনাথের সাহিত্যরচনা । শুনেছি অবন ঠাকুর ছোটোদের মুখে মুখে গল্প বলতেন, তাই শুনে রবীন্দ্রনাথ জোর করে তাঁকে দিয়ে কলম ধরান । আর তার প্রথম ফসল হলো "শকুন্তলা" । আমরা তো বলতেই পারি যে কাহিনীটা তো আসলে কালিদাসের । কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের শকুন্তলা বাংলা সাহিত্যের একটি আশ্চর্য সৃষ্টি - তা তো কালিদাসের কাব্যের অনুবাদ বা সোজাসুজি পুনর্কথন নয় । শুধু কাহিনীটাই শকুন্তলার । আর সে কাহিনী তো কালিদাসেরও নয় - মহাভারতে তো শকুন্তলা-দুষ্যন্তের কথা আছে । তবে কি বলবো যে কালিদাসও চুরি করেছেন ? না, ঐতিহাসিক কিংবা পৌরাণিক কয়েকটি চরিত্রের পূর্বজ্ঞাত ইতিহাসের ভিত্তিতে একটি সার্থক মৌলিক কাব্য রচনা করেছেন ?
রুদ্র: একদম ঠিক । অবন ঠাকুরের ছোটোদের গল্পগুলির সবই তো তাই । এশিয়া পাবলিশিং-এর একটি অমনিবাস সংস্করণের ভূমিকারে শ্রদ্ধেয়া লীলা মজুমদার এই সম্পর্কে কি লিখেছেন একটু পড়ি । এই সংকলনে আছে শকুন্তলা, ক্ষীরের পুতুল, ভূত-পতরীর দেশ, নালক, বুড়ো-আংলা, রাজ-কাহিনী, এবং আরো কয়েকটি কম পরিচিত গল্প । লীলা মজুমদার লিখেছেনঃ "এ কথা মনে রাখতে হবে যে এর মধ্যে একমাত্র ʼভূত-পতরীর দেশʼ ছাড়া বাকি সবগুলিই পুরোনো গল্পের নতুন রূপ । কিন্তু সে কি রূপ ! আনকোরা নতুন; পুরনো গল্পগুলো শুধু কাঠামো ছাড়া কিছু নয় । মনেক কথার বাহনমাত্র । আসল গল্পগুলো লেখকের হৃদয়ের বেদনায় বিধুর, মধুতে মধুর । এগুলি পড়া মানে বাংলা শিশু-সাহিত্যের সব চাইতে কোমল সুন্দর পুঁথি-লেখার পাঠ নেওয়া ।"
রাজীব: বাঃ । খুব সুন্দর লাগলো । আর তোর চতুর্থ সীজনের পরিকল্পনাও বুঝলাম । - শ্রোতাবন্ধুদের জানিয়ে রাখি, আমাদের বাকি কথকেরাও চতুর্থ পর্বের প্রস্তুতিতে মগ্ন । মহাশ্বেতা জানিয়েছে যে সে তার নেমসেক মহাশ্বেতা দেবীর প্রতি আবার বিশেষ মনোনিবেশ করবে, আর লীলা মজুমদারকেও ধরে থাকবে । পরমা আর অমৃতাও গল্প চয়নে ব্যস্ত, সময়ে জানাবে । - আজকে আর আমাদের বলার কিছু কি বাকি রইলো, রুদ্র ?
রুদ্র: খেয়াল তো হচ্ছে না । যা বক্তব্য ছিলো সবই তো বলেছি ।
রাজীব: তবে তো এবার বিদায় নেবার সময় এসেছে । আজকের মতো এখানেই ইতি টানি ।
রুদ্র: শ্রোতাবন্ধুরা, আশা করি শুনতে থাকবেন আমাদের পডকাস্ট, আর সময় পেলেই আপনাদের অভিমত আমাদের জানাবেন । আপনাদের এক-একটি ই-মেইল আমাদের এক-একটি সম্পদ । নমস্কার ।
রাজীব: নমস্কার ।