Rajib and Rudra draw a conclusion to their fourth season, and speak a little about their aspirations for the upcoming fifth season; they also announce the year-end audiobooks as usual, as well as a special episode coming up for year-end. Released December 16th, 2023. Episode 339 of Season Four.
রাজীব: নমস্কার শ্রোতা বন্ধুরা, গল্প কথার আসরের এই বর্ষ পূর্তি র বৈঠকে যোগদানের জন্যে আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ। আমি রাজীব ঘোষ।
রুদ্র: আর আমি রুদ্র দত্ত। রাজীবের কথা শুনে বুঝতেই পারছেন এটা আমাদের প্রতি সিজনের মত চতুর্থ সিজনের শেষ বৈঠকি আড্ডার এপিসোড। আজ আর গল্প পড়া হবে না, বরং আজ আমরা আমাদের গল্প পড়া নিয়ে কিছু গল্প করবো আপনাদের সাথে।
রাজীব: বুঝলি রুদ্র, আমাদের শ্রোতা বন্ধুরা হয়ত, এইটা শুনেই টিভির চ্যানেল বদলানোর মত বোতাম টিপে অন্য এপিসোডে চলে যাবেন । তবু, আমাদের কথা তো বলতেই হবে।
রুদ্র: এটা বাড়াবাড়ি তোর। আমাদের আলোচনা এতটা বিরক্তি উদ্রেক কর বোধয় নয়। যাই হোক, আজ আমরা একটু ফিরে দেখি এই চতুর্থ সিজনে আমরা কি কি পরিকল্পনা করেছিলাম এবং বছরের শেষে এসে কি কি করে উঠতে পারলাম।
রাজীব: ঠিক, তৃতীয় সিজনের শেষে আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে আমরা বাংলা সাহিত্যে প্রবাহিত নব রস কে শ্রোতা বন্ধুদের কাছে তুলে ধরব। গল্প পড়ার সাথে সাথে কাহিনীর মূল রস টির সাথে শ্রোতা দের পরিচয় করিয়ে দেব।
রুদ্র: এই নব রস এর সব রস এর গল্পই কিন্তু এই বছরে আমরা পাঠ করেছি আমাদের বিবিধ এপিসোডে।
রাজীব: এই বছরে আমাদের প্রকাশিত এপিসোডের সংখ্যা তাহলে কত রুদ্র?
রুদ্র: আজকের এই এপিসোড আমাদের ৩৩৯-তম । আর এর পরে পরেই আমাদের বার্ষিক বিরতির মধ্যে শোনার জন্য শ্রোতাবন্ধুদের জন্য যে কয়েকটি এপিসোড প্রকাশ হবে, তার সব কটি নিয়ে এই বছরের শেষে আমাদের মোট এপিসোড-সংখ্যা দাঁড়ানোর কথা তিনশো-বাহান্ন ।
রাজীব: শ্রোতা বন্ধুরা, আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত এই সব গুলো এপিসোড শোনার সুযোগ বা সময় পান নি। যারা পেয়েছেন এবং শুনেছেন, তাদের আমাদের তরফ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর যারা এখনো শোনেন নি তাদের জন্যে বলি, যে, এই নব রসের সন্ধানে আমরা বেশ কিছু সাহিত্যিক কে আপনাদের কাছে উপস্থিত করেছি যাঁরা হয়ত কিছুটা লোকচক্ষুর অন্তরালেই চলে গেছেন বর্তমানে।
রুদ্র: যেমন গজেন্দ্র কুমার মিত্র, সুমথ নাথ ঘোষ, মনোজ বসু এবং মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। এছাড়াও আমরা পরিবেশন করেছি পরিচিত সাহিত্যিক দের অপরিচিত সাহিত্য কর্ম কেও, যেমন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর কিছু প্রাপ্ত বয়স্ক দের জন্য রচিত গল্প।
রাজীব: এই সব এপিসোডের বিষয় নির্বাচন এবং সাহিত্যিক নির্বাচন করতে গিয়ে আমাদের নিজস্ব গবেষণা করতে হয়েছে। তাতে আমাদের মনের ঝুলি সমৃদ্ধ হয়েছে কারণ এই সিজনের অধিকাংশ গল্পই আমার আগে পড়া ছিল না।
রুদ্র: আবিষ্কারে র এই রোমাঞ্চ টা শ্রোতা বন্ধু দের সাথে আমরাও সমান ভাবেই ভাগ করে নিয়েছি বলা যায়।
রাজীব: বাংলা সাহিত্যের প্রাচুর্যের সমস্যার কথা আমরা আলোচনা করেছি আগে কিন্তু সত্যি বলতে কি রুদ্র, এই সিজনে এসে এই সত্যের গভীরতা কে মর্মে মর্মে অনুভব করলাম বলা চলে। কি রকম মনে হল জানিস, ওই ছোটবেলায় সাঁতার শেখার সময় পুল থেকে যেদিন রবীন্দ্র সরোবর লেকে ছেড়ে দিয়ে ইন্সট্রাক্টর বললেন, সাঁতার কাটতে অনেকটা সেইরকম, যেদিকেই যাই একই রকম গভীর, নাব্যতা র হের ফের নেই। সেই রকমই মনে হল যে চেনা পুল থেকে অচেনা লেকে এসে পড়েছি, আর চারিদিকে সাহিত্যের গভীরতা একই রকম।
রুদ্র: সত্যিই, যাই ধরি তাই যেন মনে হয় সোনা। … একটা বিষয়ে কিন্তু আমার মন বলছে একটু ত্রুটি রয়ে গেছে ।
রাজীবঃ সেটা কি ?
রুদ্রঃ এই চতুর্থ সীজনের গোড়ায় বলেছিলাম যে বাঙালী পাঠকের কাছে বিশ্বের দরজা খুলে দিতে অনেক নামজাদা সাহিত্যিক অন্য ভাষা বা অন্য সংস্কৃতির থেকে প্রাপ্ত কাহিনী অবলম্বনে সার্থক মৌলিক বাংলা সাহিত্য রচনা করেছেন । তার কাহিনীগুলিই গৃহীত - তার সাহিত্যগুণ কিছু কম নয়, আর তা নিছক অনুবাদও নয় । এইরকম সাহিত্য কিছু কিছু পাঠ করবো বলেছিলাম - এবং তা করেওছি, কিন্তু যতটা করার আশা ছিলো ততটা হয়ে ওঠেনি ।
রাজীবঃ শ্রোতাবন্ধুরা, আশা আর কৃতির মধ্য একটা ফাঁক হয়তো অনেক সময়েই থেকে যায়, কিন্তু প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই আসল কথা । গৃহীত কাহিনী অবলম্বনে রচিত সার্থক মৌলিক বাংলা সাহিত্য পাঠ করার প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাবো আশু পঞ্চম পর্বে । আশা করি আপনারা সঙ্গে থাকবেন ।
রুদ্র: আচ্ছা এবারে একটু প্রসঙ্গান্তরে যাই। 2023 সাল এবং আমাদের চতুর্থ সিজন কিন্তু আমাদের অন্তত তিনটি মাইল ফলকের বছর বা সিজন । শ্রোতা বন্ধুদের সেটা একটু মনে করিয়ে দি।
রাজীব: অবশ্যই, অবশ্যই। তুই যখন শুরু করলি, তুই বল।
রুদ্র: শ্রোতা বন্ধুরা, সিজনের শুরুতে আমরা বলেছিলাম যে আমরা ইউটিউবে আমাদের এপিসোড লাইব্রেরী হাজির করার চেষ্টা করবো এই বছরে। আপনারা যারা আমাদের সমাজ মাধ্যম এর সাথে যুক্ত তারা হয়ত জানেন যে জুন মাসে আমরা আমাদের গল্প কথার আসরের ইউটিউব চ্যানেল লঞ্চ করেছি এবং আমাদের সমস্ত এপিসোড লাইব্রেরী এখন ওই চ্যানেল থেকে শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
রাজীব: এটা একটা বিরাট পদক্ষেপ আমাদের দিক থেকে কারণ আমরা ইউটিউব এর কথা ভেবে কিন্তু আমাদের পডকাস্ট শুরু করি নি। Spotify থেকে একটি বিতর্কিত এবং বিরূপ ঘটনায় আমাদের পডকাস্ট সরিয়ে নেওয়ার ফলে আমরা ইউটিউবের দিকে মনোনিবেশ করি এবং অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের সমস্ত এপিসোড গুলো কে ইউটিউবে আপলোড এর উপযুক্ত করে তুলি।
রুদ্র: দ্বিতীয়ত, এই বছরে আমরা আমাদের 300 তম এপিসোড প্রকাশ করেছি এবং বছর ঘোরার আগেই আমাদের প্রকাশিত এপিসোডের সংখ্যা 350 পেরিয়ে যাবে | এটাও আমাদের কাছে একটা প্রাপ্তির কথা। এত দূর যে আমরা আসতে পারবো, সেটা কি টু 2020 সালে শুরুর সময় ভাবতে পারি নি।
রাজীব: নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর মাইলফলক। আর তৃতীয় টা?
রুদ্র: তৃতীয় টা হল, গল্প কথার আসরের প্রথম লাইভ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা রাজের কেরি শহরে এই বছরের জুন মাসে ।
রাজীব: এইটা সত্যিই একটা স্মরনীয় অভিজ্ঞতা। আমি, রুদ্র এবং বন্ধু মহাশ্বেতা - এই তিনজন কথক মিলে দুটি লাইভ অনুষ্ঠান করি কেরি শহরের বন্ধু বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ী দের জন্যে। আচ্ছা রুদ্র, এই লাইভ অনুষ্ঠান এর রেকর্ডিং আমরা তো এই বছরেই শ্রোতাবন্ধুদের কাছে উপস্থিত করবো ভাবছি, তাই না?
রুদ্র: হ্যাঁ, সেই রকমই পরিকল্পনা আছে। এই বছরের একেবারে শেষ এপিসোড, এবং একটি বিশেষ এপিসোড হিসেবে, এটি প্রকাশিত হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের পডকাস্টে এই লাইভ এপিসোডটি ধ্বনিগত বা audio হিসেবে যেমন প্রকাশিত হয় তেমন তো হবেই - আর যে সব শ্রোতাবন্ধুরা আমাদের পডকাস্ট ইউটিউবে উপভোগ করছেন, তাঁদের জন্য থাকবে video - যাতে দেখতে পাবেন আমরা তিনজন এক জায়গায় বসে পাঠ করছি, সেখানে উপস্থিত শ্রোতাবন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করছি ।
রাজীব: বাঃ, দারুন ব্যাপার। আশা করছি শ্রোতা বন্ধুরা ও আমাদের এই লাইভ অনুষ্ঠান এর এপিসোড উপভোগ করবেন । যাই হোক, তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই যে আমাদের চতুর্থ সিজন বেশ সফলই বলা চলে। যা যা করতে চেয়েছিলাম মোটামুটি সারা হয়েছে। কিছু কি বাদ গেলো রে রুদ্র?
রুদ্র: একটা ব্যাপার বাদ গেছে। সেটা হল প্রতি সিজন এর শেষে এবং বর্ষপূর্তি র আগে আমাদের শ্রুতি পুস্তক প্রকাশের যে নিয়ম আমরা মেনেছি গত দুবছর এবারেও তার থেকে বিচ্যুত হচ্ছি না - এই কথাটা জানানো হয় নি।
রাজীব: হ্যাঁ হ্যাঁ, এটা তো বিশেষ প্রয়োজনীয় কথা বটেই। শ্রোতা বন্ধুরা, বাংলা ও বাঙ্গালীর হারানো গৌরবের ইতিহাস কে আবার শ্রোতাদের মনে করিয়ে দেবার জন্যে এই শীতের ছুটিতে আমরা প্রকাশ করবো আমাদের শ্রুতি পুস্তক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গৌড় মল্লার। এই উপন্যাস টি শরদিন্দু বাবুর দ্বিতীয় ঐতিহাসিক উপন্যাস যেটি শ্রুতি পুস্তক আকারে আমাদের পডকাস্ট এ প্রকাশিত হবে। গত বছর প্রকাশ করেছিলাম তুমি সন্ধ্যার মেঘ।
রুদ্র: আমাদের দ্বিতীয় শ্রুতি পুস্তক টি হল হেমেন্দ্র কুমার রায় এর জয়ন্ত মানিক এর জমজমাট অ্যাডভেঞ্চার এর কাহিনী পদ্মরাগ বুদ্ধ। ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন পট ভূমিকার এবং রচনা শৈলীর কাহিনী। এই কাহিনীতেও কিন্তু ইতিহাসের অল্প ছোঁওয়া আছে । ভারতের, বিশেষ করে বাংলার, গৌরবময় অতীত অধ্যায়, যখন বাঙালীর বাণিজ্যতরী ভারত মহাসমুদ্রের বুকে অবলীলায় পাড়ি দিতো, বাংলা যখন সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চিন্তানায়ক, তখনকার কথা মনে করিয়ে দেওয়া এই কাহিনীতে হেমেন্দ্রকুমার রায়ের একটু উদ্দেশ্য তো বটেই ।
রাজীবঃ শ্রুতিপুস্তক দুটি শোনার সুবিধের জ্ন্য, আমাদের প্রথা অনুযায়ী, আমরা একাধিক এপিসোডে ভাগ করে দেবো । শ্রুতিপুস্তকের প্রথম এপিসোডে কাহিনীর সম্পর্কে আর একটু বলে নেওয়ার ইচ্ছা রইলো ।
রুদ্র: এই বারে তাহলে, চতুর্থ সিজনে দাঁড়ি টেনে, পঞ্চম সিজন নিয়ে কয়েকটা কথা বলা যাক, কি বলিস?
রাজীব: বলা যাক।
রুদ্র: তোর কি চিন্তা ভাবনা সেটা বল প্রথমে।
রাজীব: এই দ্যাখ, আমাকেই বলতে হবে প্রথমে? আচ্ছা ঠিক আছে, বলছি একটু ভেবে।
রুদ্র: ভাব।
রাজীব: দ্যাখ, আজকের দুনিয়ায় বসে একটা জিনিষ আমাকে খুব ভাবায় আজকাল। বিজ্ঞানের অনিবার্য গতিবিধি আর মানবিকতার পরিণতি। এই দুই এর টানা পোড়েন বা সংঘাত ও বলতে পারিস।
রুদ্র: আরেকটু খোলসা করে বল কি বলতে চাইছিস।
রাজীব: সারা পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ, অশান্তি আর অগণান্ত্রিকতার সাথে সাথে আরেকটা হেড লাইন অবশ্যম্ভাবী হয়ে চলে আসছে - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা artificial intelligence. প্রশ্ন উঠছে যে মানুষ কি আগুন নিয়ে খেলছে - বিজ্ঞানের অনিবার্য প্রগতি কি মানবিকতার বিরুদ্ধাচারণ করবে? তাই না? বাংলা সাহিত্য কি এই ব্যাপারে নীরব?
রুদ্র: তা নয়, এই চিন্তা বা দুশ্চিন্তা তো আজকের নয়, বহু দশকের। ইংরিজি সাহিত্যের তো বহু নমুনা রয়েছে এই সংঘর্ষ কে মূল করে, বাঙ্গালী রাও ঠিক পিছয়ে নেই।
রাজীব: এই বিষয়টা কে সেই ভাবে আমাদের পডকাস্ট এ ধরা হয় নি এখনো। তুই অনেক প্রফেসর শঙ্কুর গল্প পড়েছিস - সেগুলি তে বিজ্ঞান এর ভালো ও মন্দের সংঘাত সব সময় স্থান পেয়েছে কিন্তু বিজ্ঞান ভিত্তিক সাহিত্য বাংলায় তুলনামূলক ভাবে ইংরিজি র থেকে কম হলেও নগণ্য নয়। আরো বেশ কিছু সাহিত্যিক আছেন যাঁদের কাজ আমার ইচ্ছে আছে শ্রোতা বন্ধুদের কাছে নিয়ে আসার ।
রুদ্র: এটা অতি উত্তম প্রস্তাব। বিশেষত আমরা দুজনেই যখন আদতে বিজ্ঞানের ছাত্র। প্রযুক্তি বিদ্যার ছাত্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তো আমার অন্যতম পছন্দের বিষয় - তুই তো জানিস ই।
রাজীব: আর জানি বলেই তো মনে হচ্ছে যে এই পঞ্চম সিজনে এটা একটা ভালো থিম হবে। অবশ্য তার মানে এই নয় যে এটাই একমাত্র থিম আর সারা বছর জুড়ে আমরা শুধু এই করবো।
রুদ্র: না, না, তা তো নয় ই। চতুর্থ সিজনের নব রসের মত এটা পঞ্চম সিজন এর একটি রস হবে। আমি নিজে অবশ্য বিজ্ঞানে বিশ্বাসী । বিজ্ঞানের মূল কথাটি এই যে, সত্যকে যখন যে রূপেই পাবে না কেন, তাকে অস্বীকার কোরো না । আমার ধারণা বিজ্ঞানের মধ্যে দিয়েই মানুষের শুভবুদ্ধি, শুভচিন্তা বিকাশের সব থেকে বড় সুযোগ । তাই তুই যে অশান্তির কথা বলছিস, আমার মতে তা বিজ্ঞানের দোষ নয়, বরং জ্ঞানের বিরুদ্ধাচরণ করার ফলেই ।
রাজীব: আসল প্রয়োজন বোধহয়, মানুষের মন থেকে কুসংস্কার ভেঙে দেওয়া। কি রকম মনে হচ্ছে, অগণতান্ত্রিক স্রোতে পড়ে আর সমাজ মাধ্যমের আস্ফালনে নানা কুসংস্কার আবার ফিরে আসছে। এই একবিংশ শতাব্দীতে!
রুদ্র: তুই যেমন বিমল করের কিকিরার গল্প পড়েছিস আগে, ওই রকম কিছু গল্প বোধয় আবার পড়ার দরকার!
রাজীব: বেশ । দ্বিতীয় থিম হল। আর কিছু?
রুদ্র: আছে। কিছুদিন আগে মহাশ্বেতা একটা ভাববার মতো কথা বলেছিলো । শ্রোতাবন্ধুরা জানেন, আমাদের আসর গল্প-কথার - কাহিনী নিয়েই আমাদের কারবার । অন্যধরণের সাহিত্য, যার মধ্যে কাহিনীর ভূমিকা অল্প, যেমন কবিতা বা প্রবন্ধ-নিবন্ধ, তা এই আসরের আওতায় ঠিক আসে না । কিন্তু কাহিনী মানেই যে গদ্য, তা তো নয় । গদ্যের মাধ্যমে কাহিনী রচনা, অর্থাৎ উপন্যাস, তো বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের ব্যাপার - সম্ভবতঃ বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বাংলায় গদ্য উপন্যাস রচনা করেন । ছোটো গল্প তো আরো পরের কথা । কিন্তু বাংলায়, পদ্য বা কাব্যমাধ্যমে কাহিনী রচনার রীতি তো আরো অনেক প্রাচীন ।
রাজীবঃ যেমন মঙ্গলকাব্য ?
রুদ্রঃ ঠিক তাই ।
রাজীবঃ কিন্তু মঙ্গলকাব্য কি প্রধানতঃ ধর্মগ্রন্থের পর্যায়ে পড়ে না ? তাকে কি ঠিক কাহিনী বলা যায় ?
রুদ্রঃ আমার তো মনে হয় যায় । মঙ্গলকাব্যে অবশ্যই দেব-দেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের উদ্দেশ্য আছে । কিন্তু তা অনেক ক্ষেত্রেই একটা কাহিনীর মাধ্যমে - যে কোনো morality tale যেমন । অনেক ধর্মগ্রন্থই তো তাই । আবার অনেক ধর্মগ্রন্থ শুধুই আচার-অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বর্ণনা বা উপদেশ । রামায়ণ তো ধর্মগ্রন্থ - আবার কাব্যও - আবার কাহিনীও বটে ।
রাজীবঃ তা ঠিক । আর পরের যুগেও কাব্যে কাহিনী রচনা করেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত - এমনকি রবীন্দ্রনাথও কিছু কিছু কাহিনীমূলক কবিতা লিখেছেন । একটা কাব্যগ্রন্থের নামই তো "কথা ও কাহিনী" ।
রুদ্রঃ শ্রোতাবন্ধুরা, আমরা আমাদের এই আসরে প্রধানতঃ গদ্য পাঠই চালিয়ে যাবো । কিন্তু পঞ্চম পর্বে আমাদের লক্ষ্য থাকবে কিছু-কিছু পদ্য-কাহিনীর পাঠও ।
রাজীবঃ তাহলে এবার আমাদের শ্রোতাবন্ধুদের এই বছরের মতো বিদায় জানাই । জানুয়ারী মাসটা আমরা এপিসোড প্রকাশ করার থেকে বিরতি নেবো, আর কাজ চালিয়ে যাবো আবার ফেব্রুয়ারী থেকে যাতে আসর চালু করতে পারি - যেমন করি প্রতি বছর ।
রুদ্রঃ এই বিরতির মধ্যে শোনার জন্য আপনাদের জন্য থাকছে আমাদের বর্ষশেষের নিবেদন দুটি শ্রুতিপুস্তকের বারোটি এপিসোড, আর একটি বিশেষ এপিসোড আমাদের জুন মাসের লাইভ আসরের রেকর্ডিং ।
রাজীবঃ শীতের ছুটি সকলের আনন্দে কাটুক, এই কামনা করি ।
রুদ্রঃ আর নতুন বছরের জন্য সকলের প্রতি শুভেচ্ছা । আজকে আসি । নমস্কার ।
রাজীবঃ নমস্কার ।