Rajib and Rudra introduce the fifth season of the podcast, reminding listeners of their aspirations for this season, and how some of them feel increasingly appropriate and topical. Released February 17th, 2024. Episode 353 of Season Five.
[Lead Music plays, and is abruptly interrupted by Rajib, reciting some lines of a poem.]
ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।
নাস্তিক সেও পায়ে বিধাতার বর,
ধার্মিকতার করে না আড়ম্বর।
শ্রদ্ধা করিয়া জ্বালে বুদ্ধির আলো,
শাস্ত্রে মানে না, মানে মানুষের ভালো।
বিধর্ম বলি মারে পরধর্মেরে,
নিজ ধর্মের অপমান করি ফেরে,
পিতার নামেতে হানে তাঁর সন্তানে,
আচার লইয়া বিচার নাহিকো জানে,
পূজাগৃহে তোলে রক্তমাখানো ধ্বজা, --
দেবতার নামে এ যে শয়তান ভজা।
রুদ্রঃ এটা কি হলো, রাজীব ?! ... মানে, আমরা সাধারণতঃ তো শ্রোতাবন্ধুদের নমস্কার করে, নিজেদের পরিচিতি দিয়ে, আরম্ভ করে থাকি -
রাজীবঃ থাকি । কিন্তু কখনো কখনো বিবেক আর বিচারবুদ্ধির তাড়নায় নিয়ম ভাঙতে হয় । সাম্প্রতিকের প্রতি দৃষ্টি রাখা অবশ্যই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য নয়, আমাদের ভাষা আর সংস্কৃতির অতীত গৌরবকে ভাবীকালের চৌকাঠে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের চেষ্টা । কিন্তু আমরা তো আমাদের দেশকালের থেকে ভিন্ন নই । তাই আজ এই ২০২৪ সালের গোড়ায় দাঁড়িয়ে, আমাদের দেশ, সংস্কৃতি, ধর্মের দিকে চোখ মেলে, একেবারে চুপ থাকতে পারলাম না । আমার এই অস্থিরতাটুকু কেন, তা শ্রোতাবন্ধুরা সহজেই বুঝবেন ধরে নিচ্ছি, আর ক্ষমাও করবেন আশা করি ।
রুদ্রঃ নিশ্চয়ই করবেন । শ্রোতাবন্ধুরা, আমাদের আসর গল্পপাঠের, তাতে আমাদের লক্ষ্য কাল-নিরপেক্ষ থাকা । কালজয়ী সাহিত্যের সাধনাই আমরা করতে চাই । কিন্তু আমরা যেমন গল্প পাঠ করি, তেমনি নিজেদের মনের কথাও কিছু কিছু আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই । আপনারা তা সহানুভূতি নিয়েই শোনেন, আমাদের গভীর বিশ্বাস । ... যাইহোক, তাহলে আর একবার আমাদের আসর চালু করার চেষ্টা করি ?
[Lead music plays again, in usual format]
রাজীবঃ নমস্কার, শ্রোতাবন্ধুরা - গল্পকথার আসরের আজকের বৈঠকে যোগদান করার জন্য আপনাদের সবাইকে অজস্র ধন্যবাদ । আমি রাজীব ঘোষ ।
রুদ্রঃ আর আমি রুদ্র দত্ত । - শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের আসর আমাদের পঞ্চম বর্ষের বা পঞ্চম পর্বের সূচনা । ২০২০-তে আরম্ভ - ২১, ২২, ২৩, আর এই ২৪ ।
রাজীবঃ আমরা আমাদের এক-একটা পর্বের সূচনা আর সমাপ্তির এপিসোডগুলির নানারকম নামকরণ করি, আপনারা তো জানেন । এর আগে তৃতীয় সন্ধ্যা, চতুর্থ ঊষা, এইসব নাম ব্যবহার করেছি বলে, মনে হলো এই এপিসোডের নাম দিই "পঞ্চম প্রত্যুষ" ।
রুদ্রঃ চতুর্থ পর্বের শেষে আমরা আপনাদের জানিয়েছিলাম যে এই পঞ্চম পর্বে আমরা কয়েকটা বিশেষ জিনিষের প্রতি লক্ষ রাখার চেষ্টা করবো । তার মধ্যে একটা আমাদের কাছে প্রতিদিন আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে । ভাষা, বেশভূষা, আচার-ব্যবহারের মতোই সংস্কারও আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । কিন্তু সংস্কার যখন অন্ধ সংস্কারে, কুসংস্কারে পর্যবসিত হয়, তখন তা অবশ্যই বরণীয় নয় । অন্ধ সংস্কার অনুসরণ করা সহজ - তার প্রলোভন মানুষের সামনে এসেছে বারবার, প্রতি জাতি বা দেশের ইতিহাসে । ভবিষ্যতেও আসতে থাকবে । কিন্তু সত্যের আলোকও শাশ্বত - আমরা চাইলেই তাকে গ্রহণ করতে পারি । অন্ধকার আর আলোর এই যুদ্ধ মানুষের হৃদয়ে, মানবজাতির চেতনায়, চিরন্তন ।
রাজীবঃ সাহিত্যও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । সাহিত্য তো শুধু চিত্তবিনোদনের বস্তু নয় - সাহিত্য আমাদের মননকে তৈরি করে, আমাদের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক চরিত্রের মুখে তুলে দেয় কথা । তাই সাহিত্যের মধ্যেও আমরা কুসংস্কার আর সত্যের আলোকের এই টানাপোড়েন দেখতে পাই ।
রুদ্রঃ অন্ধ সংস্কারের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষার বহু সাহিত্যিক বহু রচনা করেছেন - তার মধ্যে কিছু কিছু আবার একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে কুসংস্কারের সরাসরি বিরোধিতা করার, কুসংস্কার ভাঙার গল্প । বিমল করের কিকিরার গল্পগুলি এই পর্যায়ে পড়ে ।
রাজীবঃ শ্রোতাবন্ধুরা, চতুর্থ সীজনের শেষে উল্লেখ করেছিলাম যে ইদানীং কালে উত্তরোত্তর এই ভয় আমাদের মনে আসছে যে অগণতান্ত্রিক স্রোতে পড়ে আর সমাজ মাধ্যমের আস্ফালনে নানা কুসংস্কার আবার ফিরে আসছে । তাই এই সীজনে আমরা সেইরকম কুসংস্কার ভাঙার গল্প রাখছি একেবারে গোড়ার দিকেই ।
রুদ্রঃ আর এও আগে বলেছি, যে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বিজ্ঞান আমাদের সত্যের আলোককে দেখতে সাহায্য করে - সত্যের পথে নিয়ে যায় । কারণ বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থিত কথাটিই এই যে এক্সপেরিমেন্টের সাহায্যে যে অভিজ্ঞতামূলক সত্য আবিষ্কৃত হয়, তাকে স্বীকার করে এগিয়ে চলা - "ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে" । কোনো জাতির বিজ্ঞানমনস্কতা তার সংস্কৃতিরই অন্তর্গত, এবং সাহিত্যও তার মধ্যে পড়ে । তাই এই সীজনে আমরা বিজ্ঞাননির্ভর বা কল্পবিজ্ঞানের গল্পের দিকেও একটু বেশী মনোনিবেশ করবো ।
রাজীবঃ এইরকম সাহিত্য আমরা যে আগে এই আসরে পাঠ করিনি তা নয় - প্রোফেসর শঙ্কু আর প্রেমেন্দ্র মিত্রের কিছু বিজ্ঞাননির্ভর গল্প ছাড়াও রুদ্র বৈজ্ঞানিক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর রচনা পাঠ করেছে । তাঁর "ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে" লেখাটিতে দেখেছি কিভাবে ভ্রমণকাহিনীর সঙ্গে মিশেছে প্রকৃতির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, ধর্মচেতনার সঙ্গে সহজে সহাবস্থান করেছে বৈজ্ঞানিক চেতনা । তাঁর "হাজির" লেখাটিতে এক সত্যসন্ধানীর জীবনব্যাপী সত্যান্বেষণের কাহিনীর আভাস পেয়েছি । এই সীজনে আমরা সেই ধারাটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ।
রুদ্রঃ একটা বিষয় লক্ষণীয়, যে সাহিত্যে বিজ্ঞানমনস্কতার সূত্রপাত তুলনামূলকভাবে একটু আধুনিক ব্যাপার । ঐতিহাসিক ভাবে সাম্প্রতিক কালে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলিউশন ঘটে যাওয়ার পরেও, ঊনবিংশ শতব্দীতে, এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে, সাহিত্যে বিজ্ঞানের কোনো স্থান আছে বলে প্রায় কেউই মনে করতেন না - আচার্য জগদীশচন্দ্রের মতো কতিপয় দূরদর্শীর কথা বাদ দিলে । সাহিত্য প্রধানতঃ ললিতকলার অঙ্গ হিসেবেই মনে করা হতো - কবি-সাহিত্যিক ছাড়াও যাঁরা সাহিত্যচর্চা করতেন তাঁরা প্রায় সকলেই সমাজবিদ্যা বা হিউম্যানিটিজ-এর জগতের মানুষ ।
রাজীবঃ বিজ্ঞানের জগতের মানুষ যে একেবারে সাহিত্যচর্চা করতেন না তা নয়, তার উদাহরণ রাজশেখর বসু ওরফে পরশুরাম - উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর নামও করা যেতে পারে । কিন্তু তাঁরাও সাহিত্যচর্চার সময়ে সামাজিক বিষয় নিয়েই সাহিত্যরচনা করতেন । আসলে জনমানসে বিজ্ঞানের স্থান অন্য জায়গায় ছিলো । সাহিত্যে বিজ্ঞান প্রবেশ করলো প্রধানতঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে । এটা কিন্তু শুধু বাংলা সাহিত্যের কথা নয় - সারা বিশ্ব জুড়েই এই একই গল্প । পাশ্চাত্য সাহিত্যেও, এই সময়ের আগে বিজ্ঞান এসেছে হয় ভয়ের মুখোশ পরে, যেমন মেরী শেলীর ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে, কিংবা অ্যাডভেঞ্চার বা রোমান্সের নিছক বাহন হিসেবে, যেমন জুল ভের্নের কাহিনীগুলিতে । সাহিত্য হিসেবে তা অতুলনীয় হলেও, তাকে ঠিক বিজ্ঞাননির্ভর সাহিত্য বলা চলে না ।
রুদ্রঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জনমানসে বিজ্ঞান সম্পর্কে কৌতূহল ও উৎসাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে, সাহিত্যে কিভাবে আস্তে আস্তে বিজ্ঞান এবং কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর প্রধান অঙ্গ হিসেবে নিজেদের জায়গা করে নিলো, তা নিয়ে অনেক বিদগ্ধজ্ন অনেক চিন্তাশীল প্রবন্ধ রচনা করেছেন, আমরা আর সে নিয়ে আলোচনা করছি না ।
রাজীবঃ মজার কথা এই যে, অন্ততঃ বাংলা সাহিত্যে সেই প্রবেশ কিন্তু সাহিত্যিকদের হাত ধরেই । সত্যজিৎ রায় আর প্রেমেন্দ্র মিত্র দুজনেই শিল্প-সাহিত্যের জগতের মানুষ ।
রুদ্রঃ এবং হয়তো সেই জ্ন্যই এঁদের কল্পবিজ্ঞানের লেখা মূল্যবান হলেও, সবসময় খুব বিজ্ঞানমনস্ক নয় । বিশেষ করে প্রোফেসর শঙ্কুর কাহিনীগুলিতে, বিজ্ঞানকে প্রায় ম্যাজিকের মতো ব্যবহার করা হয়েছে । এই গল্পগুলির আসল মূল্য হলো মানবিকতার, এবং বৈজ্ঞানিক সত্যের প্রতি আস্থা আর শ্রদ্ধার প্রকাশে । কিন্তু অন্যান্য কিছু গল্প, যেমন "বঙ্কুবাবুর বন্ধু" বা "অনুকূল" গল্পে, সত্যজিৎ রায় অনেক বেশী সার্থক কল্পবিজ্ঞানের গল্প রচনা করেছেন । প্রেমেন্দ্র মিত্র অবশ্য বিজ্ঞানকে খুব যথাযথই ব্যবহার করেছেন, বিশেষ করে ঘনাদার গল্পগুলিতে । কিন্তু বিজ্ঞানের চেয়ে সেই গল্পগুলির আবেদন প্রধানতঃ সমাজ, রাজনীতি, ও মানবিকতার প্রতি ।
রাজীবঃ কিন্তু বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছু বাঙালী লেখক এগিয়ে এলেন যাঁরা বিজ্ঞানের স্নাতক, বা এমনকি জীবিকায় বিজ্ঞানসাধক । সবথেকে প্রথমে নাম করতে হয় অদ্রীশ বর্ধনের, আরো অনেকে যেমন সমরজিৎ কর, এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়, অনীশ দেব, এই পর্যায়ে পড়েন । এঁদের অনেকেরই অতিব্যস্ত কর্মজীবন থাকার ফলে সাহিত্যকীর্তির সংখ্যা স্বভাবতই কম - কিন্তু তার একটা বিশেষ মূল্য আছে । এই সীজনে এঁদের লেখা পাঠ করার উদ্দেশ্য রইলো আমাদের ।
রুদ্রঃ এইখানে হয়তো আর একটা কথা বলে নেওয়া ভালো । আমাদের আসরে আমরা বেশ অনেকগুলি ভূতের গল্প, বা অলৌকিক গল্প, পাঠ করেছি । প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এত কথা বলছি, আর এদিকে বারবার অলৌকিক গল্প পাঠ করছি কেন ?
রাজীবঃ সেইসঙ্গে এই প্রশ্নটাও মনে আসতে পারে, যে বাংলায় এত ভৌতিক বা অলৌকিক গল্পের ছড়াছড়িই বা কেন ? অলৌকিক গল্প লেখেননি, এমন বাঙালী সাহিত্যিক বিরল - একজনও আছেন কি না জানি না । বাঙালী সাহিত্যসমাজ কি তাহলে বিশেষভাবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ?
রুদ্রঃ অবশ্যই নয় । আর আজকের প্রসঙ্গে সেই কথাটাই একবার বলে নেওয়ার প্রয়োজন মনে হলো । আসলে ভূতের গল্প, হাসির গল্প, মায় রহস্য গল্প, আসলে লেখকের উদ্দেশ্যের বাহন । কিন্তু গল্পের আসল উদ্দেশ্য অনেকসময়ই সম্পূর্ণ আলাদা ।
রাজীবঃ আসলে পাঠকের মন স্পর্শ করতে হলে, লেখক আর পাঠকের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে গেলে, একটা প্রাথমিক ভিত্তি লাগে, যা লেখক এবং পাঠকবর্গের সকলের কাছে পূর্বপরিচিত - যাকে বলে কমন গ্রাউন্ড । হাসি আর ভয় - এই দুইই আমাদের প্রতিটি মানুষের অতিপরিচিত । বোধহয় সেইজন্যই, ভূতের গল্পের খোলসে কাহিনীর অন্তর্নিহিত মূল কথাটা পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার রাস্তাটা বহু সাহিত্যিকই বারবার ব্যবহার করেছেন । কিন্তু সেইসব মূল কথাগুলিতেই গল্পগুলির আসল পরিচয় ।
রুদ্রঃ যেমন, রবীন্দ্রনাথের "কঙ্কাল" গল্পটি, যেটা তুই পাঠ করেছিলি - সত্যিই একটি নরকঙ্কালের জবানীতে বলা - কিন্তু গল্পের শেষে বুঝতে পারি যে সেটা নিতান্তই আনুষঙ্গিক, একটা জ্বালাভরা ব্যর্থ প্রেমের কাহিনী মৃতা নায়িকার নিজের কথায় শোনাতে পারার জন্য ।
রাজীবঃ বা পরশুরামের "ভূশন্ডীর মাঠে" গল্পটি, যেটা তুই পাঠ করেছিলি - ভূতের গল্পও বটে, হাসির গল্পও বটে - কিন্তু আসলে পুনর্জন্ম, ধর্ম, বিবাহ, এইসব নিয়ে সামাজিক অন্ধ বিশ্বাস আর সংস্কারের একটি ব্যঙ্গচত্র ।
রুদ্রঃ বহু হাসির গল্প সম্বন্ধেও একই কথা বলা যায় ।
রাজীবঃ হ্যাঁ, ঠিকই । - শ্রোতাবন্ধুরা, আমরা আমাদের পাঠ করার জন্য গল্প চয়নে আমরা এইধরণের চিন্তা ভাবনা কিছুটা করে থাকি । আর সেইজন্যই আমাদের চয়নে আমরা অন্য অনেক পডকাস্ট বা বাচিক শিল্পের অনুষ্ঠানের থেকে একটু আলাদা । সাহিত্য পাঠ তো চিত্তবিনোদনের জন্য বটেই; কিন্তু একই সঙ্গে সাহিত্য পাঠের অনেক গভীর উপকারও আছে - সাহিত্য আমাদের নিজেদের জাতি-সংস্কৃতি-ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষিত করে, পাঠকের এবং সমাজের মনন সৃষ্টি করে । এইসব মিলিয়েই সাহিত্যগুণ ।
রুদ্রঃ আমরা আমাদের চয়নের মধ্যে দিয়ে তাই চেষ্টা করে চলি যাতে আমাদের পাঠের মধ্যে শ্রোতাবন্ধুরা বিনোদনও পান, আর গভীরতর মূল্যও খুঁজে পান । আর সেই জন্যই প্রতিটি এপিসোডের শেষে আমাদের আন্তরিক অনুরোধ - আপনাদের মতামত আমাদের জানাবেন, আমাদের পাঠ সম্পর্কেও, আর আমাদের গল্প চয়ন সম্পর্কেও । ... শ্রোতাবন্ধুরা, এই কথা বলতে গিয়ে আর একটি কথা মনে আসছে । আপনাদের মধ্যেই কেউ কেউ এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন । বাংলা সাহিত্যের পাঠের অনুষ্ঠান ইউটিউবে বহু আছে, পডকাস্টও আছে । তার মধ্যে অনেকগুলিই আমাদেরই মতো অপেশাদারী, কিন্তু বাচিক বা অন্য করণ শিল্প যাঁদের জীবিকা, এমন কেউ কেউও সম্প্রতি বাংলা গল্প পাঠের পডকাস্ট আরম্ভ করেছেন ।
রাজীবঃ আপনাদের মধ্যে কারুর কারুর মনে হয়েছে, যে আমরা যে সব গল্প পাঠের জন্য চয়ন করেছি, এইরকম কোনো অনুষ্ঠানে তার পরে পরেই একই গল্প চয়ন করা হয়েছে - এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা পাঠ আরম্ভ করার আগে সেই সাহিত্য সম্পর্কে যতদূর জানি যা বলার চেষ্টা করেছি, সেই একই ধরণের কথা অন্য পডকাস্টেও শোনা গেছে । আপনারা আমাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন ।
রুদ্রঃ শুনে প্রথমে একটু হতচকিত হলেও, ভেবেচিন্তে দেখলাম যে এ নিয়ে আমাদের বিশেষ কিছুই বলার নেই । প্রথমতঃ, গল্প চয়নে মিল থাকা, এমনকি কোনো গল্প সম্বন্ধে একই ধরণের কথা বলা, হয়তো খুব আশ্চর্যের কিছু নয় - এটা ঘটনাচক্র হতেই পারে । দ্বিতীয়তঃ, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে আমাদের পডকাস্ট আর কোনো অনুষ্ঠানকে অনুপ্রাণিত করছে, তাহলে সে তো খুব ভালো কথা । বাংলা সাহিত্যের চর্চা যত চলতে থাকে ততই ভালো, অধিকন্তু ন দোষায় বলে তো প্রবাদই আছে ।
রাজীবঃ আর একটা প্রবাদও আছে, সেটা হলো imitation is the sincerest form of flattery - সেটাও আমরা মনে রাখতে পারি ।
রুদ্রঃ হ্যাঁ । - এবার তাহলে আজকে এপিসোডের ইতি টানবো নাকি, রাজীব ?
রাজীব: ইতি টানার আগে আরেকটা মাইলফলক এর কথা না বললেই নয়। মানে সিজন শুরুর আগে সেই খানে পৌঁছনোর একটা রোমাঞ্চ বোধ তো আছেই। কাজেই আজ সেই কথাটা শ্রোতা বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নেওয়া যাক।
রুদ্র: আমাদের পডকাস্ট এর ডাউনলোড এর সংখ্যা একশো হাজার বা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে জানুয়ারি মাসে। আমরা ইউটিউব এর পরিসংখ্যান যোগ করি না , সেটা ধরলে হয়ত এই মাইল ফলক আগেই পৌঁছনো যেত।
রাজীব: ভালো কথা রুদ্র, ইউটিউব প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়লো যেটা একবার শ্রোতা বন্ধুদের মনে করিয়ে দেওয়া জরুরী।
রুদ্র: কোন কথা?
রাজীব: এপ্রিল এর 2 তারিখ এর পরে গুগল পডকাস্ট আর থাকছে না। তার বদলে পডকাস্ট সব শোনা যাবে ইউটিউব মিউজিক অ্যাপ এ। গুগল পডকাস্ট এর সাবস্ক্রাইবার যারা তারা হয়ত এই খবর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন। তবু একবার বলে রাখছি যে আমাদের গল্প কথার আসরের সব এপিসোড ইউটিউব মিউজিক থেকে শোনা যাবে। আপনারা অনুগ্রহ করে এই অ্যাপ টি ডাউনলোড করে আমাদের পডকাস্ট এ সাবস্ক্রাইব করে নেবেন।
রুদ্র: আমরা আগে আমাদের শ্রোতা বন্ধুদের থেকে শুনেছি যে তাঁরা আমাদের পডকাস্ট খুঁজে পাচ্ছেন না। স্পটিফাই থেকে আমাদের পডকাস্ট উধাও হওয়ার পর এইরকম অনেক প্রশ্ন এসেছিল। তাই আমরা একটু উদ্যোগ নিচ্ছি এইবার গুগল পডকাস্ট এর শেষ যাত্রার আগে!
রাজীব: শেষ যাত্রা! ভাল বললি বটে! হা হা! - ইউটিউবে আমাদের পডকাস্ট এর আগে থেকেই আছে । গুগল পডকাস্টের অন্ত হলে ঠিক কি ভাবে গুগল বর্তমান পডকাস্টগুলির সঙ্গে গুগল থেকে আমদানী করাগুলোকে ইউটিউবে স্থান দেবেন, পাশাপাশি নাকি অন্য কোনো ভাবে, তা আমরা এখনো সঠিক জানি না ।
রুদ্র: আমরা জানতে পারলে বা বুঝতে পারলে নিশ্চয়ই আপনাদের জানাবো । আজকের মতো, আমাদের পঞ্চম প্রত্যুষে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানিয়ে আমরা আজকের মত বিদায় নি। আমাদের এই পর্বের পরিকল্পনা ভাগ করে নিলাম আপনাদের সাথে। বেশ কিছু নতুন সাহিত্য ও সাহিত্যিক দের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবার অঙ্গীকার রইলো প্রতিবারের মতই।
রাজীব: শুনতে থাকুন, গল্প কথার আসর এর প্রতিটি এপিসোড আপনাদের পছন্দের অ্যাপ এ। আর আমাদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলুন আমাদের ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট বা ইমেইল এর মাধ্যমে।
রুদ্র: তাহলে আজ বিদায়। নমস্কার।
রাজীব: নমস্কার ।