Rajib and Rudra bid farewell to listeners - not for good but just for the winter break! Released December 14, 2024. Episode 444 of Season Five.
রাজীব: নমস্কার শ্রোতা বন্ধুরা। গল্প কথার আসরের আজকের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ। আমি রাজীব ঘোষ।
রুদ্র: আমি রুদ্র দত্ত। আজকে আমাদের দু হাজার চব্বিশ সালের এবং পঞ্চম সিজনের যবনিকা পাতের আসর।
রাজীব: ঠিক যবনিকা বলাটা উচিৎ হবে না হয়ত, কারণ প্রতি বছরের মত এই বারও আমরা শ্রোতা বন্ধুদের শ্রুতি সুখের কথা মাথায় রেখেই খান দুই শ্রুতি পুস্তক প্রকাশ করে দেব - আর সেটা বছর শেষ হবার আগেই হবে। তবু, কথকতার শেষ আসর এটাই।
রুদ্র: কথকতার শেষ আসর … কিন্তু শুধু এই বছরের মতো ! চিরকালের জন্য নয় - প্রতি বছরের মতোই, আবার ফেব্রুয়ারি মাসে ফিরে আসবো ।
রাজীবঃ এবং সেটা হবে আমাদের ষষ্ঠ সীজনের আরম্ভ । আজ এই কথোপকথনের এপিসোড, আর আমাদের শ্রুতিপুস্তকের এপিসোডগুলির প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে, আমাদের পঞ্চম সীজন পূর্ণ হলো । আর সেইজ্ন্যই, আজকের এই এপিসোডের নাম পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ।
রুদ্রঃ এখন মনে হচ্ছে, নামটা হয়তো একটু বিভ্রান্তিকর হয়ে গেছে । মানে "আসরের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি" নাম শুনে যদি কোনো শ্রোতাবন্ধু ভেবে থাকেন যে এই আমাদের পডকাস্টের চিরবিদায়, এবারে এই বন্ধ হওয়া ঝাঁপ আর খুলবে না, তাহলে খুব দোষ দেওয়া যায় কি ?
রাজীবঃ তাইতো । আমরা অবশ্য পাঁচ সীজন পূর্ণ হওয়ার কথাই ভেবেছিলাম । শ্রোতাবন্ধুদের আশ্বাস দিই যে ঠিক এখনই আমাদের থামার উদ্দেশ্য নেই । ঝাঁপ তো কোনোকালে শেষবারের বার বন্ধ করতেই হবে, কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ঝাঁপিতে যে এখনো অনেক মণিরত্ন যাতে আমাদের হাতই দেওয়া হয় নি । তার মধ্যে আমাদের সাধ্যমত অন্ততঃ কিছু কিছু ঝাঁপি থেকে বার করে আলোয় তুলে ধরার উদ্দেশ্য আমাদের এখনকার মতো বজায় রইলো ।
রুদ্র: ঠিক বলেছিস।এই আশ্বাসটুকু শ্রোতাবন্ধুদের - এবং কিছুটা নিজেদেরও - দেবার জন্যই আজকের এই এপিসোড । শেষ করার আগে, রাজীব তুই বোধহয় এই বিশেষ বছর টা নিয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলি - তাই না?
রাজীব: অবশ্যই চেয়েছিলাম। এই বছরটা বাংলা ও বাঙ্গালী দের কাছে একটা বিশেষ ব্যঞ্জনাময় বছর হয়ে থাকবে। আমাদের কাছেও।
রুদ্র: ঠিক কি কি কারণে বল একটু।
রাজীব: প্রথমত ধর, এই বছরে আমরা গল্প কথার আসরের 400 তম এপিসোড প্রকাশ করলাম। আর সেটাও করলাম কিনা খোদ 2000 বছর পুরোনো ইটালির রোম শহরে বসে! এইটা কি নিছকই কাকতালীয়?
রুদ্র: কাকতাল এ নাহলেও ফাঁকতালে হয়েছে বলেই আমার মনে হয়! আমরা দুই মক্কেল ই যে একই সময়ে ওই শহরে গিয়ে উপস্থিত হব এইটা অবশ্যই কাকতালীয়! তবে সমাপতন টা খুবই রোমহর্ষক - (হাসি) মানে কোনো রকম কথার মার প্যাঁচ না করেই বলছি!(হাসি)
রাজীব: যাই হোক, শ্রোতা বন্ধুরা, ওই 400 তম এপিসোডে আমরা সশরীরে আপনাদের সামনে ভিডিও তে উপস্থিত। ইউটিউব চ্যানেলে দেখে নিতে পারেন যদি আগে দেখে না থাকেন।
রুদ্র: বেশ, এটা বোঝা গেল। আর কি?
রাজীব: এর পর, আগস্ট মাসে কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসক কে ধর্ষণ ও হত্যা করা নিয়ে যা ঘটে গেল তার বিস্তারিত আলোচনা করার দরকার নেই। আপনারা সবাই তা জানেন। বাঙ্গালী হিসেবে, সারা বিশ্বে আমাদের জন চেতনা কে এই ঘটনা যে ভাবে নাড়া দিয়েছে, ঐক্য বদ্ধ করেছে বিচারের দাবিতে তার সমান্তরাল খুঁজে পাই নি কোথাও। আমাদের জীবন কালে তো বটেই, ইতিহাস ঘেঁটেও নয়। কাজেই এটা সেই অর্থে যুগান্ত কারী বলা চলে পরিণতি যাই হোক না কেন।
রুদ্র: আমাদের কাজ সাহিত্য পাঠ, সমাজ সংস্কার নয় এই আসরে। কিন্তু এই রকম কোনো ঘটনা যখন ঘটে যা অন্তঃস্থল কেও নাড়িয়ে দিয়ে যায় তখন মূক থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমরা এই আসরে কয়েকটি গল্প পড়েছি পিঠোপিঠি যেগুলিতে এই ঘুন ধরা সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। অদ্রীশ বর্ধনের "বেদনা বিচার চায়", নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর "একটি চলচ্চিত্রের ভূমিকা", পরশুরামের "মহাবিদ্যা" গল্পগুলি এই পর্যায়ে পড়ে। এই কথাও স্মরণে রাখা ভালো, যে সামাজিক সংগ্রাম, ব্যক্তিস্বাধীনতা আর স্বৈরাচারের দ্বন্দ, শুধু আজ বা শুধু বাংলার সংকট নয় - এই দ্বন্দ চিরন্তন । এই মুহূর্তে শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতে, এবং শুধু ভারতে নয় বহু দেশে, স্বৈরাচারের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা অতি প্রত্যক্ষ । আর যেহেতু আমরা এবং আসরের অন্যান্য কথকরা সবাই-ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকি, তাই আমাদের সেই দ্বিতীয় বাসভূমিও যে তার ব্যতিক্রম নয়, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট । তাই ব্যক্তিমর্যাদা, সামাজিক স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টায় আমাদের জাগ্রত থাকা অতি প্রয়োজন - আর তাই মনীষীদের বাণী, গল্পের ছলে তাঁদের প্রেরণা, আমাদের কাছে আজ বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ।
রাজীব: এবার আর একটি কথায় আসা যাক । চতুর্থ সিজনের শেষে আমরা ঘোষণা করেছিলাম যে পঞ্চম সিজনে আমরা বাংলায় কল্প বিজ্ঞান নির্ভর সাহিত্য সম্ভার কে আপনাদের কাছে নিয়ে আসবো। বাংলা সাহিত্যের মূল স্রোতে কিছুটা অবহেলিত থেকে গেছে এই ঘরানার বাংলা গল্প উপন্যাস। অবহেলিত বা অজানা থেকে গেছেন বেশ কিছু শক্তিশালী সাহিত্যিকও। কল্প বিজ্ঞান বলতেই অনেকেই ইংরিজি সাহিত্য এবং সাহিত্যিক দের কথাই তোলেন যেমন অ্যাসিমোভ, আর্থার সি ক্লার্ক, বা জুলে ভার্ন। কিন্তু বাংলায় এই ঘরানার অনেক লেখাই আছে।
রুদ্র: আমরা এই সিজনে বাংলা কল্প বিজ্ঞান এর আদি জনক প্রেমেন্দ্র মিত্র, এবং তৎপরবর্তী প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা অদ্রীশ বর্ধন দিয়ে শুরু করে ক্ষিতীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য, সমরজিৎ কর, রনেন ঘোষ, দিলীপ রায় চৌধুরী, নিরঞ্জন সিংহ প্রমুখ অনেক নতুন লেখকের গল্প আপনাদের জন্যে পাঠ করেছি।
রাজীব: আবার পাঠ করেছি এমন অনেক লেখা, যা কল্পবিজ্ঞানের আওতায় পড়ে, কিন্তু যার রচয়িতারা আমাদের কাছে সুপরিচিত হলেও, কল্পবিজ্ঞানের জন্য হয়তো আমাদের কাছে পরিচিত নন - যেমন লীলা মজুমদার, সত্যজিৎ রায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় । আবার পাঠ করেছি একটি বিশিষ্ট রচনা, যার চারটি অধ্যায় রচনা করেছিলেন চার স্বনামধন্য লেখক ।
রুদ্র: আশা করি ভিন্ন স্বাদের এই গল্প গুলি আপনাদের ভালো লেগেছে । শ্রোতাবন্ধুরা, এই প্রচেষ্টা আমরা আমাদের আগামী সীজনেও চালিয়ে যাবো ।
রাজীব: তৃতীয়ত, এই সিজনে আমরা আবার 100 টি এপিসোড প্রকাশ করে ফেলবো আমাদের শ্রুতি পুস্তকের প্রকাশ সমাপ্ত হলেই। এই নিয়ে পরপর তিন বছর লাগাতার আমরা অন্ততঃ 100 টি করে এপিসোড এক এক বছরে আপনাদের কাছে নিয়ে আসতে পারলাম। এইটা আমাদের কাছে একটা বিরাট মাইল ফলক।
রুদ্র: একশোবার! মানে কোনো রকম দ্ব্যর্থকথা বা পান না করেই বলছি আর কি! (হাসি)
রাজীব:(হাসি) আসলে, শ্রোতা বন্ধুরা, আর সমস্ত কিছুর মতই, আমাদের প্রয়াস ও অসীম নয়। কে কখন কি ভাবে থেমে যাবে কে জানে? তাই, এই অন্তর্বর্তী মাইল ফলক গুলো আমরা উচ্চকিত ভাবে আপনাদের কাছে আওড়ে যাই। এটা যত না নিজেদের ঢাক পেটানোর প্রচেষ্টা, তার চেয়ে বেশি, নিজেদেরই পায়ের পেশী তে আরো কিছুটা দৌড়ানোর প্রতিজ্ঞা যোগানোর প্রয়াশ। (স্মিত হাসি)
রুদ্র: শ্রোতা বন্ধুরা, বন্ধু রাজীব ঢাক পেটানোর বা অনুপ্রেরণার কথা যখন তুল্লোই তখন বলি যে, এই পঞ্চম সিজনে আমরা কিছু এমন সাহিত্য কে আপনাদের কাছে পরিবেশন করেছি যাকে পাঠের আকারে আগে কেউ করার কথা বোধহয় ভাবেন নি। সেদিক থেকে এটা আমাদের একটা মৌলিক কাজ। রানী চন্দের গুরুদেব একটি অত্যন্ত মূল্যবান এবং সুপঠ্য একটি রচনা। রবীন্দ্রনাথ এর শেষ দিকের কিছু বছর কে উনি দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে, এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তাঁর দেখা রবীন্দ্রনাথ রক্ত মাংসের মানুষ, দোষ, ত্রুটি, উদ্বেগ, আনন্দ, বৃহত্তর এবং ক্ষুদ্রতর সমস্ত অংশ নিয়েই ধরা দেন। তিনি তখন আর ঠিক নাগালের আড়ালে থাকা মহামানব নন। এই রবীন্দ্রনাথ কে রানী চিনিয়ে দেন তাঁর কলমের স্বচ্ছন্দ আঁচড়ে। আমরা খুবই খুশি রানী চন্দ এর গুরুদেব কে শ্রুতি পুস্তকের আকারে প্রকাশ করতে পেরে।
রাজীব: লীলা মজুমদার এর অনুগল্প “আমিও তাই”-ও এইরকমই আরেকটি রচনা। আত্মজীবনী মূলক কিন্তু সরস নিবন্ধ যাকে বলে। এইটিও আমাদের পঞ্চম সিজনের পরিবেশনা। দশটি এপিসোডে মহাশ্বেতা এই পুরো বইটির পঞ্চাশটি অনুগল্পই পাঠ করেছে আমাদের এই পঞ্চম সীজনে ।
রুদ্র: তাহলে হাতে রইল কি? মানে ষষ্ঠ সিজন কি আর দরকার আছে নাকি এইবার যাও সব নিজ নিজ কাজে বলে আমরাও পাগলা দাসুর মত নাটক শেষ করি? (হাসি)
রাজীব: পাগল অনেকে হয় কিন্তু পাগলা দাশু হওয়া কি মুখের কথা রে! (হাসি) আবার সে এসেছে ফিরিয়া বলে ষষ্ঠ সিজন আমরা শুরু করবই,! 500 তম এপিসোডের মাইল ফলক ছোঁয়া বাকি আছে না!
রুদ্র: বেশ, তবে সেই অপেক্ষাতেই শ্রোতাবন্ধুদের ছেড়ে গেলাম । ফিরে আসবো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে । প্রতিবারের মতোই, সীজন আরম্ভ করবো কথোপকথন দিয়ে - আগামী সীজনের পাঠপরিকল্পনার কথা তখনই জানাবো । শ্রোতবন্ধুরা, সঙ্গে থাকবেন আশা করি ।
রাজীব: আজকের মতো আপনাদের কাছে বিদায় গ্রহণ করলাম । শীতের ছুটির দিনগুলো ভালো কাটুক সকলের, নতুন বছর নিয়ে আসুক নতুন উদ্যম আর নতুন আশা সকলের জন্য । আমাদের এই ছোট্ট পডকাস্টের কথা ভুলে যাবেন না আশা করি - ইউটিউব, অডিবল, অ্যাপল, আমাজ্ন, যেখানে পছন্দ সেখানে আমাদের পডকাস্ট শুনতে থাকুন, শোনাতে থাকুন ।
রুদ্র: আর আমাদের যদি ভুলেও যান, বাংলা সাহিত্য, তার অতীত গরিমা, তার ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা দয়া করে ভুলবেন না । "বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা-- সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান ।"
রাজীব: নমস্কার ।
রুদ্র: নমস্কার ।