Rajib and Rudra briefly celebrate the 500th episode of this podcast. Released July 19, 2025. Episode 500 of Season Six.
রাজীব: নমস্কার শ্রোতা বন্ধুরা। গল্প কথার আসরের এক অতি বিশেষ আসরে যোগদানের জন্যে আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ। আমি রাজীব ঘোষ।
রুদ্র: আমি রুদ্র দত্ত। আজ আমাদের পাঁচশো তম এপিসোড।
রাজীব: তিনশো তম এপিসোডের সূচনায় বলেছিলাম যে পাঁচশো তম তে হয়ত একদিন পৌঁছব, সেদিন একটা মার মার কাট কাট কিছু করব, আজ দু একটা কথা বলে ছেড়ে দিচ্ছি, তাই না রুদ্র?
রুদ্র: হ্যাঁ, হাতে সময় না থাকলে যা হয় আর কি, বাকি কথা পরে হবে বলে ভবিষ্যতের ঘাড়ে দায়িত্ব দিয়ে রাখা! তাই দু-এক কথাতেই বলে নিই - এই পাঁচশো-তম এপিসোডের পথে আমরা পাঁচটি পর্ব বা সীজন সম্পূর্ণ করে এখন ষষ্ঠ সীজনের মধ্যস্থানে আছি - গত সেপ্টেম্বরে আমরা এই পডকাস্টের পাঁচ বছর পূর্ণ করেছি, আর এই কয়েক মাস আগে আমাদের পডকাস্টে পঠিত লেখক-লেখিকার সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে । আরো এগিয়ে চলার পথে এই মাইলফলকগুলি আমাদের কিছু প্রেরণা জোগায়, এবং একটু ভালো-লাগাও ।
রাজীব: হ্যাঁ, তা তো বটেই । মানে এই পাঁচ-পঞ্চাশ-পাঁচশো-র পঞ্চযোগে, একেবার সাপের পাঁচ-পা না দেখলেও, আমরা যে খুশী তা আমরা অকপটে স্বীকার করছি ! আর যত ছোটোই হোক, এই এক-একটা মাইলফলকে আমাদের সঙ্গে আমাদের শ্রোতাবন্ধুরাও খুশী হন, এই আশা রাখি ।
রুদ্র: একবার ভেবেছিলাম, এই পাঁচশো এপিসোডের মধ্যে কোন সাহিত্যিকের কটি, কোন রসের কটি, কোন দৈর্ঘ্যের কটি গল্প-উপন্যাস পাঠ হলো তা নিয়ে একটু আলোচনা করবো । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এই পঞ্চম শতক পেরিয়ে ষষ্ঠতে পদার্পণ যত তাড়াতাড়ি সারা যায়, ততই বোধহয় ভালো । আর পডকাস্টের এইসব তথ্য তো আমাদের ওয়েবসাইটে আছেই - কৌতূহলী শ্রোতবন্ধুদের দেখে নেবার তো কোনো বাধা নেই । নাহয় পরে কোনো সময় বিশদ আলোচনা করা যাবে । - আবার সেই ভবিষ্যতের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপানো হয়ে যাচ্ছে বটে, তা বুঝতে পারছি ।
রাজীব: যা বলেছিস, আজকে হল না, আগামী দিনে দেখব, এই ব্যাপারটা ভারী অদ্ভুত। পৃথিবীর মঙ্গল করা গেল না, তাই ভবিষ্যতের ঘাড়ে পৃথিবী কে ছেড়ে চন্দ্র বিন্দুর গানের মত চল মঙ্গলে চল বলি। - তবে এই কথাটাও হয়তো সত্যি, যে যতটা করার ইচ্ছা বা কল্পনা, কাজে তাই করার মধ্যে কিছু অপূর্ণতা তো সবসময়ই থেকে যায়, আর সেটা হয়তো ভালোই হয় । সেই অপূর্ণতাকে ভবিষ্যতে আরো পূর্ণ করার স্বপ্নই হয়তো মানুষকে সুকুমার রায়ের খুড়োর কলের মতো ক্রমাগত সামনে টেনে নিয়ে যায় ।
রুদ্র: ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাটা তো আমাদের অভ্যেস, সেই জন্যেই তো কল্প বিজ্ঞান আছে। শ্রোতা বন্ধুরা সেই বিজ্ঞানের কথা বলতে গিয়ে বলি, আমরা বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছি হিউস্টন এর মহাকাশ কেন্দ্র মিউজিয়াম এর সামনে। আমাদের পাঁচশো তম এপিসোড এই খান থেকেই প্রচারিত হচ্ছে।
রাজীব: এটা একটা সমাপতন। গত বছর থেকেই, আমরা ভবিষ্যত অর্থাৎ আজ আমরা যা করে উঠতে পারি না বা পারছি না কিন্তু ভবিষ্যতে পারবো বলে আশা রাখছি বিজ্ঞানের সাহায্যে - যাকে সাহিত্যিকেরা কল্প বিজ্ঞান বলেছেন, সেই ধরার বেশ কিছু গল্প আপনাদের কাছে পাঠ করেছি। চারশো তম এপিসোডে আমরা সভ্যতার কিছুটা উৎসের দিকে ফিরে গিয়েছিলাম রোমে - পাঁচশো তম তে ফিরলাম, বিজ্ঞান এর কেন্দ্র স্থলে আবার, ভবিষ্যতের দরজায় কড়া নাড়তে ।
রুদ্র: একটু পিছু ফিরে দেখলে বলতে হয় যে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল যখন তখন পৃথিবী একটা ঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। সেটা ছিল কোভিড প্যান্ডেমিক। মানুষের সাথে বীজানুর যুদ্ধ। আমরা জানতাম না এই যুদ্ধের ফলাফল কি হবে। কিন্তু মনে আশা ছিল যে মানুষ যে বিজ্ঞান শক্তি কে করায়ত্ত করেছে তার ফলে জয় আমাদেরই হবে ।
রাজীব: অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু মানুষের প্রতি, মানুষে মানুষে সহযোগিতা আর সহমর্মিতার প্রতি বিশ্বাস ছিল। তাই আমরা আসর শুরু করি টেনিদার গল্প দিয়ে, চাচা কাহিনী দিয়ে। পাঁচ বছর পরে, পাঁচশো এপিসোডের দোর গোড়ায় এসে দেখছি পৃথিবী আবার অস্থির, যুদ্ধ বিগ্রহ, নৈরাজ্য, স্বৈরতন্ত্র গ্রাস করছে চারিদিকের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ কে। এখন আর সেই পাঁচ বছর আগের বিশ্বাস টা খুঁজে পাচ্ছি না।
রুদ্র: কোন বিশ্বাস টা? মানুষ হিসেবে আমরা যে সত্যিই অগ্রগামী হয়েছি এইটা?
রাজীব: হ্যাঁ, এইটা। বিজ্ঞান এগিয়েছে পাঁচ বছরে, আমরা কি এগিয়েছি? নাকি ভূতের মত আমাদের পা গুলো পেছনের দিকে, তাই কলকাতার বাসের মতোই পিছন দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? (হাসি)
রুদ্র: চিন্তার কথা বটে। তাহলে কি এই পাঁচশো উত্তর পর্বে তুই এই জাতীয় কিছু পড়বার কথা ভাবছিস?
রাজীব: ভাবছি। সাহিত্যের অদ্ভুত ব্যাপার হলো কালোত্তীর্ণতা। ইতিহাসও তো বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটায়, কাজেই আগের লেখা হঠাৎ করেই সমকালীন হয়ে যায়। এটা আমি বার বার লক্ষ্য করি।
রুদ্র: কিন্তু, এসবের মধ্যেও একটা দার্শনিক নিস্পৃহতা কি কাম্য নয়? সময়ের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে কি হবেই? আমরা তো এক্টিভিস্ট নই !
রাজীব: এটা দায়বদ্ধতা নয়। আমাদের পডকাস্টে মহাশ্বেতা কিছুদিন হলো ধারাবাহিক ভাবে মৈত্রেয়ী দেবীর রবীন্দ্র-স্মৃতিচারণ "মংপু-তে রবীন্দ্রনাথ" পাঠ করছে । মনে পড়ছে, মৈত্রেয়ী দেবী লিখেছেন, মংপু তে বসে রবীন্দ্রনাথ রেডিও শুনতে চাইতেন না ১৯৩৯ সালে আবার চাইতেন ও। তখন জাপান চীন আক্রমণ করছে, উনি বিষন্ন হতেন আর বলতেন যে রেডিও শুনতে ইচ্ছে করে না ওনার, কিন্তু না শুনেও পারেন না। এটাও সেই রকমই বলতে পারিস।
রুদ্র: বুঝলাম। শ্রোতা বন্ধুরা ভাবতে পারেন তুই হঠাৎ নিজেকে কবির সঙ্গে তুলনা করছিস হয়ত (হাসি), কিন্তু বুঝতে পারছি, সময় টা ভালো নয়। যাই হোক, শ্রোতা বন্ধুরা, সময় ভালো বা খারাপ, আমরা আমাদের ভালোবাসার কাজ করেই যাব। আপনাদের জন্যে গল্পের ডালি সাজিয়ে আনবো। আসলে, সাফল্যের মূলে থাকে নিয়মানুবর্তিতা - ডিসিপ্লিন। আমরা ঐ ডিসপ্লিন এর ডিপ্লোমা ধারী আর কি!
রাজীব: তার মানে হল, বছরের বাকি অংশে ভিন্ন স্বাদের আরো কিছু গল্প উপন্যাস থাকছে আমাদের আসরে। কল্প বিজ্ঞান থেকে শুরু করে, হাস্য কৌতুক, ঐতিহাসিক, মনোমুগ্ধকর প্রবন্ধ, রহস্য, রোমাঞ্চ, গা শির শির করা ভৌতিক কাহিনী, এমনকি প্রাপ্ত বয়স্ক দের গল্পও - মানে প্রাপ্ত মনস্ক দের জন্যে গল্প (হাসি)।
রুদ্র: আজ শেষ না করলেই নয়, নাসা যে নাসিকা ঢোকানোর কাজ টাও বাকি আছে কিনা। আজ চলি তবে। পর্ব ৫০১-এ আবার মোলাকাত হবে একক পাঠকের সাথে। নমস্কার।
রাজীব: নমস্কার।