LECTURE 4 CHAPTER 01
প্রথম অধ্যায় পাঠ-৪: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিঃ কম্পিউটার সিস্টেমের সাহায্যে কোন একটি পরিবেশ বা ঘটনার কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক রুপায়ন হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে কৃত্রিম পরিবেশকে এমনভাবে তৈরি ও উপস্থাপন করা হয়,যা ব্যবহারকারীর কাছে সত্য ও বাস্তব বলে মনে হয়। ১৯৬২ সালে মর্টন এল হেলগি তাঁর তৈরি সেন্সোরামা স্টিমুলেটর নামক যন্ত্রের মাধ্যমে প্রথম ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আত্নপ্রকাশ করেন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে বাস্তব অনুভব করার জন্য তথ্য আদান প্রদানকারী বিভিন্ন ধরণের ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। যেমন-
· মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে (Head Mounted Display)
· হাতে একটি ডেটা গ্লোভ (Data Glove),
· শরীরে একটি পূর্ণাঙ্গ বডি স্যুট (Body Suit) ইত্যাদি পরিধান করতে হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সিস্টেম তৈরির উপাদান সমুহঃ
· ১। ইফেক্টরঃ ইফেক্টর হলো বিশেষ ধরণের ইন্টারফেস ডিভাইস যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিবেশের সাথে সংযোগ সাধন করে। যেমন- হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে।
· ২। রিয়েলিটি সিমুলেটরঃ এটি এক ধরণের হার্ডওয়্যার যা ইফেক্টরকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করে। যেমন- বিভিন্ন ধরণের সেন্সর।
· ৩। অ্যাপ্লিকেশনঃ বিভিন্ন সিমুলেশন সফটওয়্যার সমূহ। যেমন- অটোডেস্কের “Division”।
· ৪। জিওমেট্টিঃ জিওমেট্রি হলো ভার্চুয়াল পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত তথ্যাবলী।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার/প্রয়োগঃ
প্রকৌশল ও বিজ্ঞানঃ বিজ্ঞানের জটিল বিষয় নিয়ে গবেষণা, গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেসের সিমুলেশনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যপক প্রয়োগ রয়েছে।
খেলাধুলা ও বিনোদনঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কল্যাণে কম্পিউটারের সাথে কোন খেলায় অংশগ্রহন বা কম্পিউটার সিস্টেমে অনুশীলন সহজ হচ্ছে। দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক সিমুলেশনের মাধ্যমে নির্মিত হচ্ছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর ছবি যা সবার কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
ব্যবসা ও বাণিজ্যেঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ভোক্তা বা ক্রেতার কাছে পণ্যের ব্যবহার পদ্ধতি ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ সহজে উপস্থাপন করা যায়। এছাড়া ব্যবসায়িক কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান। উৎপাদিত বা প্রস্তাবিত পণ্যের কৌণিক উপস্থাপন ইত্যাদি।
শিক্ষাক্ষেত্রেঃ শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অনেক প্রভাব রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার জটিল বিষয়গুলো সহজে উপস্থাপন এবং পাঠদানের বিষয়টি সহজে চিত্তাকর্ষক ও হৃদয়গ্রাহী করা যায়।
স্বাস্থ্যসেবাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের অন্যতম বৃহৎ ক্ষেত্র হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। এই প্রযুক্তিতে সিমুলেশনের মাধ্যমে জটিল সার্জারি অত্যান্ত সূক্ষভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। চিকিৎসকদের নতুন চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা অর্জন বা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ড্রাইভিং নির্দেশনাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে গাড়ি চালনার বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তব ধারণা লাভ করতে পারছে ফলে প্রশিক্ষণার্থী দ্রুত গাড়ি চালনা শিখতে পারছে।
সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণেঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে সেনাবাহিনীতে অস্ত্র চালনা এবং আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহারে কম সময়ে নিখুঁতভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়।
বিমানবাহিনী প্রশিক্ষণেঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে বিমানবাহিনীতে বিমান চালনা প্রশিক্ষণ এবং প্যারাস্যুট ব্যবহারে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়।
নৌবাহিনী প্রশিক্ষণেঃ নৌবাহিনীতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ এবং ডুবোজাহাজ চালনা প্রশিক্ষণে ব্যপকভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।
মহাশূণ্য অভিযানেঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে ত্রিমাত্রিক সিমুলেশন তৈরির মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষকরা সৌরজগৎ এর গ্রহ বা গ্রহাণুপুঞ্জের অবস্থান, গঠনপ্রকৃতি ও গতিবিধি, গ্রহের মধ্যস্থিত বিভিন্ন বস্তু বা প্রাণের উপস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কে সহজেই ধারণা অর্জন করতে পারে।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে যাদুঘরে ত্রিমাত্রিক চিত্রের মাধ্যমে ইতিহাস-ঐতিহ্য উপস্থাপন করা যায়। ফলে আগত দর্শণার্থীরা তা দেখে মুগ্ধ হয় ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করে থাকে।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাবঃ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিবাচক প্রভাবঃ
· ১। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেতে জটিল বিষয়গুলো ত্রিমাত্রিক চিত্রের মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী করা যায়।
· ২। ঝুঁকিপূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সহজ ও সরল করা সম্ভব।
· ৩। বাস্তবায়নের পূর্বে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সিমুলেশনের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খরচ কমানো যায়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক প্রভাবঃ
· ১। বাস্তবের স্বাদ পাওয়ায় কল্পনার রাজ্যে বিচরন করতে পারে।
· ২। যেহেতু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একটি কম্পিউটার সিস্টেম তাই এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
· ৩। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যয়বহুল হওয়ায় সবাই এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সুবিধা পায় না। ফলে ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি হয়।
প্রথম অধ্যায় পাঠ-৫: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট, এক্সপার্ট সিস্টেম।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা(Artificial Intelligence): মানুষ যেভাবে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়, কৃত্তিম উপায়ে যদি কোন যন্ত্রকে সেভাবে চিন্তা ভাবনা করানো যায়, তখন সেই যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তাকে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ অ্যালান টুরিং (Alan Mathison Turing)।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যার একটি শাখা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ক্ষেত্র হচ্ছে এক্সপার্ট সিস্টেম, রোবটিক্স ইত্যাদি। এক্সপার্ট সিস্টেম এবং রোবটিক্সে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন- LISP, CLISP, PROLOG, C/C++, JAVA ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
এক্সপার্ট সিস্টেমঃ এক্সপার্ট সিস্টেম হলো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এমন একটি সিস্টেম যা মানুষের চিন্তা ভাবনা করার দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধানের সক্ষমতাকে একত্রে ধারণ করে। যা মানব মস্তিস্কের মত পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই সিস্টেমে বিশাল তথ্য ভাণ্ডার দিয়ে সমৃদ্ধ
থাকে, যাকে নলেজবেজ বলা হয়। এই নলেজবেজে যে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নেওয়া যায়।
· নলেজবেজ- ক এর বাবা ঘ এবং ঘ এর ছেলে প
· ক ও প এর মধ্যে সম্পর্ক কি?
এক্সপার্ট সিস্টেম এর ব্যবহারঃ
· ১। রোগীর রোগ নিরাময়ে
· ২। বিভিন্ন ডিজাইনের ভূল সংশোধনে
· ৩। জেট বিমান চালনায় ও সিডিউল তৈরিতে
· ৪। ভূগর্ভস্থ তেল অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ইত্যাদি।
বর্তমানে ব্যবহৃত বিভিন্ন এক্সপার্ট সিস্টেমসমূহ এবং তাদের কাজঃ
· Deep blue: দাবা খেলার বিচারক হিসেবে কাজ করা।
· Internist: চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান এবং নির্ভূলভাবে জটিল রোগের সার্জারি করা।
· Mycin and Cadulus: চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করা।
· Mycsyma: গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা।
· Dendral: প্রোগ্রামিং শেখানো।
· Prospector: খনিজ পদার্থ ও আকরিক অনুসন্ধান করা।
রোবোটিক্সঃ প্রযুক্তির যে শাখায় রোবটের ডিজাইন, গঠন, পরিচালন ও প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, সেই শাখাকে রোবোটিক্স বলা হয়।
রোবটঃ রোবট হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এক ধরণের ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল যান্ত্রিক ব্যবস্থা যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা কোন ব্যক্তির নির্দেশে কাজ করতে পারে। এটি তৈরী হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিতে যা Computer program দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। রোবট মানুষ কিংবা বিভিন্ন বুদ্ধিমান প্রাণীর মতো কাজ করতে পারে। এটি মানুষ ও মেশিন উভয় কর্তৃক পরিচালিত কিংবা দূর নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
একটি সাধারণ রোবটে নিচের উপাদান বা অংশগুলো থাকেঃ
· প্রসেসরঃ রোবটের মূল অংশ যেখানে রোবটকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রন করার একটি প্রোগ্রাম সংরক্ষিত থাকে। যা রোবটের সকল কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে।
· পাওয়ার সিস্টেমঃ লেড এসিড ব্যাটারি দিয়ে রোবটের পাওয়ার দেওয়া হয় যা রিচার্জেবল।
· ইলেকট্রিক সার্কিটঃ রোবটের হাইড্রোলিক ও নিউমেট্রিক সিস্টেমকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।
· অ্যাকচুয়েটরঃ রোবটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নডাচড়া করার জন্য বৈদ্যুতিক মটরের সমন্বয়ে তৈরি বিশেষ ব্যবস্থা হলো অ্যাকচুয়েটর।
· সেন্সরঃ রোবটের ইনপুট যন্ত্র হলো সেন্সর। যার মাধ্যমে পরিবেশ থেকে ইনপুট নেয়।
· মুভেবল বডিঃ রোবটে চাকা, যান্ত্রিক পা বা স্থানান্তর করা যায় এমন যন্ত্রপাতি।
রোবটের বৈশিষ্ট্যঃ
· ১। রোবট সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত যা সুনির্দিষ্ট কোন কাজ দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
· ২। রোবট পূর্ব থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।
· ৩। রোবট বিরতিহীনভাবে কাজ করতে পারে।
· ৪। রোবট যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ বা অস্বাস্থ্যকর স্থানে কাজ করতে পারে।
· ৫। এটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরতে বা স্থানান্তরিত হতে পারে।
· ৬। দূর থেকে লেজার রশ্মি বা রেডিও সিগন্যালের সাহায্যে রোবট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রোবটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারগুলো ঃ
· ১। রোবটকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় কম্পিউটার-এইডেড ম্যানুফেকচারিং এ, বিশেষ করে যানবাহন ও গাড়ি তৈরির কারখানায়।
· ২। যে সমস্থ কাজ করা স্বাভাবিকভাবে মানুষের জন্য বিপজ্জনক যেমন- বিস্ফোরক নিস্ক্রিয়করণ, ডুবে যাওয়া জাহজের অনুসন্ধান, খনি অভ্যন্তরের কাজ ইত্যাদি কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের বা বিপদজ্জনক ও জটিল কাজগুলো রোবটের সাহায্যে করা যায়।
· ৩। কারখানায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবটের সাহায্যে নানা রকম বিপজ্জনক ও পরিশ্রমসাধ্য কাজ যেমন- ওয়েল্ডিং, ঢালাই ,ভারী মাল উঠানো বা নামানো যন্ত্রাংশ সংযোজন ইত্যাদির ক্ষেত্রে রোবটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
· ৪। সামরিক ক্ষেত্রেও রোবটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হচ্ছে বোমা অনুসন্ধান কিংবা ভূমি মাইন সনাক্ত করা।
· ৫। চিকিৎসাক্ষেত্রে রোবট সার্জনদের জটিল অপারেশনে ও নানা ধরণের কাজে সহায়তা করে থাকে।
· ৬। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে রোবটের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মহাকাশ অভিযানে এখন মানুষের পরিবর্তে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বলিত রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে।