অলস দুপুর অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন : পর্ব ০৭
অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন : পর্ব ০৭
সাইটে প্রবেশের জন্য আপনাকে স্বাগতম। এটি অলসদুপুর ওয়েবম্যাগের একটি অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন। এই সংকলনে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে যারা দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন, লিটলম্যাগ চর্চা করে চলেছেন, তাদেরকে বিশেষ ভাবে স্থান দেয়া হচ্ছে। আমরা জানি যে পুঁজিবাদের বিকাশের প্রক্রিয়াটিই এমন যে ইটের নিচে সবুজ ঘাস চাপা পড়ে যায়। আমরা প্রশান্তির জন্য দিগন্তের দিকেই তাকিয়ে থাকি।
অলসদুপুর সেইসব কবিদেরই খুঁজে চলেছেন। যারা নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন, কোন এক দূরে বসে লিটলম্যাগ চর্চা করে চলেছেন বছরের পর বছর। সন্ধ্যায় জোনাকির মত তার চোখও জ্বলে ওঠে নতুন কবিতায়। সেইসব নতুন কবিতাকে খুঁজে চলেছে অলসদুপুর।
অনলাইন কোন স্থান নয়। ইন্টারনেট মানে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের সাথে যুক্ত আপনি আমি। এখন আমি আপনি বিশ্বের যে কোন প্রান্তের কবিতার সাথেও যুক্ত। কিন্তু প্রান্ত তো আছে। যে এসে মিলিত হয় মুক্তির সাথে। অলস দুপুরের কাছে জেলা হচ্ছে এক একটি প্রান্ত, যে যুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলা কবিতা নয়, বিশ্ব কবিতার সাথে। আমরা অলস দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের কবিতা এই আয়োজনের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি।
সংকলন পদ্ধতি: একজন মূল সম্পাদক থাকেন। মূল সম্পাদক থাকবেন দুপুর মিত্র। বিভিন্ন জেলা থেকে একজন অতিথি সম্পাদক নির্বাচিত করেন। অতিথি সম্পাদক তার জেলা থেকে কবি নির্বাচিত করেন এবং তাদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ করে মূল সম্পাদকের নিকট প্রেরণ করেন। প্রতিটি পোস্ট এক একটি জেলা বা প্রান্তের সংকলন হিসেবে গণ্য হবে। যিনি অতিথি সম্পাদক থাকবেন তার সম্পাদনা নিয়ে একটি ছোট সম্পাদকীয় থাকবে। এভাবে ছোট ছোট সংকলন মিলে একটি বড় সংকলন হবে।
যাদের কবিতা সংকলিত হবে
১. দীর্ঘদিন ধরে লিটলম্যাগে জড়িত
২. বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত
৩. সাহিত্যচর্চায় নিয়মিত
সংকলনটি চূড়ান্ত নয়। বিভিন্ন সময় এটি আপডেট হবে। সংকলনটি সমৃদ্ধ করতে পাঠকের প্রস্তাবনা ও মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। প্রস্তাবনা বা মন্তব্য জানান mitra_bibhuti@yahoo.com এ।
অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন: ০৭ পর্বের অতিথি সম্পাদক কবি নীহারুল ইসলাম। তিনি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে কবিতা সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে ‘অলসদুপুর’ ওয়েব ম্যাগাজিনকে সহায়তা করেছেন। তার প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।
নীহারুল ইসলামের সম্পাদকীয়
দুপুর মিত্রের কাছ থেকে অনুরোধ এসেছিল মুর্শিদাবাদ জেলার কবিদের কবিতা সংগ্রহ করে দিতে তাঁর ‘অলস দুপুর’ ওয়েবম্যাগাজিনের জন্য। নিজের ব্যস্ততার কারণে আমি এই জেলায় যাঁরা নিবিড় ভাবে কবিতা-চর্চা করছেন, তাঁদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি। এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তবু যাঁদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ করতে পেরেছি তাঁরা হলেন- দেবাশিস সাহা, অরিত্র সান্যাল, অর্ণব রায়, হাসি খাতুন ও অয়ন চৌধুরী। এঁদেরই গুচ্ছ কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হল ‘অলস দুপুর’। এর বাইরেও এই জেলায় আরও অনেক কবি আছেন। স্বভাবতই এই পাঁচজন কবির কবিতা মুর্শিদাবাদ জেলার কবিতা-চর্চার সামগ্রিক পরিচায়ক নয়। বরং বলা যেতে পারে এটা সামান্য একটা ধারণা মাত্র। আগামীতে সময় সুযোগ পেলে এই জেলার কবিতা-চর্চার সামগ্রিক একটা ধারণা দেওয়ায় চেষ্টা করব ... -নীহারুল ইসলাম ১২/১০/২০১৮
দেবাশিস সাহা
জন্ম তারিখ -১/১/১৯৭০, শিক্ষা - স্নাতক , পেশা -ব্যাংক আধিকারিক, নেশা- গাছ পোষা আর কবিতাযাপন , সম্পাদিত পত্রিকা - ছাপাখানার গলিকাব্যগ্রন্থ - ১.মা,আমি তোতন বলছি ২.কুড়িয়ে পাওয়া অক্ষরঘুম ৩. প্রজাপতি রঙের গ্রাম ৪.পোষা মৃতদেহ ৫.সর্ম্পকের পাতাবাহার ৬.সার্কাস জীবন ৭.রাস্তা ভর্তি চাঁদ
পুরস্কার - রামমোহন লাইব্রেরী থেকে ২০০৭ এ লিটল ম্যাগাজিন এ সেরা কবিতা উন্মুখ এর জীবনানন্দ পুরস্কার,
অন্যকথা পুরস্কার
কাঠের জাহাজ
আমার মাঝরাতে
নি:শব্দে আসে কাঠের জাহাজ
আমাকে
নদী বোঝে
সহ্য করে জল
গাছেরা আত্মহত্যা করবে ভেবে
সার সার দেবদারুর দুধস্নান
ডানা খুলে রেখে
আলোতে স্নান করে মাছেরা
কাঠের জাহাজ ঘরে ফেরে
ভাঙা ডানা
দুধস্নান ভর্তি করে
আয়না
ভাঙা চোরা মুখে লেগে আছে
আয়নার কান্না
ভেসে যায় সর্ম্পকের শব
ঔষধ রঙের সবুজ
শুয়ে আছে ফসলের আশমানে
পাষাণের ঘাটে মরণের কোলাহল
মেঘ ভাঙা জল
পুষে রাখো
বুকের বাম ঘরে
আমি ভাঙা আয়না
ভাঙাচোরা মুখে
লিখে রাখি জীবনের কথা।
বন্ধন
শিকলে পেঁচিয়ে গেছে গাছ
গাছ শিকল ধরেই বাচঁতে চায়।
গাছ
ফুল দেবে না জেনেও
একটা গাছ পুষেছি
পোষা গাছ
ফল দিতেও অপারগ
কাটাঁ ভর্তি গাছ
আমাকে রক্তাক্ত করে
রক্তগুলোকে ফুল ভেবে
জড়িয়ে ধরি গাছ।
অরিত্র সান্যাল
জন্ম ১৯৮৩। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ নাবিক বিন্দু থেকে, আজ কারও জন্মদিন নয়, নিজের আয়ুর মতো শ্যামবর্ণ, একটা বহু পুরোনো নেই।
তোমার বিপুল আনন্দাশ্রু হোক
১)
নদীতে
এইমাত্র একটি শব্দ হল, ঠং –
কে গো স্টীমার থেকে ছুঁড়লেন আধুলি?
একটি উলঙ্গ ছেলে ঝাঁপ দিতেই ঝন্ ঝন্ শব্দে শুরু হল
কোন উপন্যাসে হারিয়ে যাওয়া কর্ণফুলি।
কত পাতার নীচে থাকে ঘটনা প্রবাহ
আর একমাত্র ভবিষ্যৎ ছাড়া বোঝারও উপায় নেই,
যে সংসারে ছিটেফোঁটা ভিজে ভাবও থাকে না, সেও
নদীর কতটা কাছে ছিল তলে তলে।
আমাদের পরিবারে যা যা কিছু ছোটখাটো সর্বনাশ
তা থেকেই পদ্মার প্রভাব আমাদের আনন্দ শিকড়ে
গেঁড়ে বসে। আমার জন্মের পর, বলতে নেই,
নদী দূরে সরে যায়। যদিও বিকেলের হাওয়ায়
মাঝেমাঝে রূপালী বালি উড়ে এসে মানচিত্র ঢেকে দিত।
আমাদের চোরাজীবনের ওপর চিকচিক করত
বেঁচে থাকার ভাপ, মনে হত মানবজনমে আর হল না
নিজেদের ইলিশ প্রজন্ম ভেবে
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত লোকজন
এসো বিশ্বপিতা মাতা অতর্কিতে আমাদের ঘপাৎ খেয়ে নাও।
২)
এক অক্ষম কবি মরলে দূর প্রান্তরে আগে একটা ছাড়া ছাড়া বন হয়ে যেত
হাঁটতে গেলে উদ্বিগ্ন হাওয়ার ঝাপট লাগছে গায়ে
তখনও তত্ত্ব প্রমাণ হয়নি
তবু জগদীশ জানতেন এগুলো আত্মাই, খুব একটা অতৃপ্ত হয়ত নয়
পরিস্থিতি বদলেছে এখন
সারাদিন বেতার জুড়ে খসখস শব্দ আসে
লেখো একটি মাদক বাক্য যাতে মৃত্যুর হাল্কা ছায়া
হেলতে দুলতে চলতে থাকে বাসের পিছু পিছু মন্থর ট্র্যাফিকে,
ভবের মায়াটা সহজেই যাতে দিগন্তে দেখা যায়
লোকগানের এই একটিই আকুতি
এখন আর পাঁচ টাকায় পোষায় না বাবু
৩)
আবহাওয়াবিদরা কি জানেন
দূষণ, দীর্ঘশ্বাসেই বাড়ে সব থেকে বেশি?
এটা বাদা অঞ্চল।
পচা নৃমাংসের সারে পাথুরে গাছ জন্ম নিয়েছে আজ।
এখানে এ ছাড়া শোনা যায়,
মানুষের আন্ডারগ্রাউন্ড অবস্থার থেকে কিছু প্রাণ-ঘাতী উদ্ভিদ
জন্ম নেয়। তাদের ঝরা-পাতা একেকটি ব্যর্থ কররেখার মতো
শুকিয়ে যাওয়া আকাশের তলে পড়ে। আমার ভালো লাগে না ইতিহাস,
আমার ভূগোল ভালো লাগে না
আমার সত্যি কথা লিখতে বড় ক্লান্ত লাগে এখন–
আমাদের এঁটেল মাধ্যাকর্ষণ একটু একটু খেয়ে নেয় নদী,
বাস্তুহারার শিকড়ের কাছে স্মিত হয়ে থাকে এক জলজ দর্পন
ও ঢেউ-হারা অশ্রুর মানুষ, প্রতিস্থাপনের ফলে, অতীতও
বদলে যায়।
মাটির দিকে তাকিয়ে যা কিছুই দেখি পূর্বজন্মের স্মৃতি মনে হয়,
ওই সূর্যের ছায়া মনোলিথের ওপর পড়ে বিষন্নতায় পালিশ দেয়
দূষণ, দীর্ঘশ্বাসেই বাড়ে সব থেকে বেশি।
কেননা, কার্বন ডাই অক্সাইডের ওপর অভিমানের যেকোনওরকম স্তরই
একটি সরল দর্শনের পক্ষে, আরও মারাত্মক হয়ে থাকে
অর্ণব রায়
অর্ণব রায়ের জন্ম ১৯৮২ সালে। পশ্চিমবঙ্গের মালদা শহরে। পৈতৃক স্থান মুর্শিদাবাদের লালগোলা। শিক্ষা লালগোলা, মালদা, কলকাতা ও বেনারস। কর্মস্থল মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ। পেশা শিক্ষকতা। দুখানি কবিতার বই, ঋজু চিকন বিস্মিত সরল (২০১১, পত্রলেখা) ও করুণাসমগ্র (২০১৮, সিগনেট প্রেস) ও একখানি ছোটগল্প সংকলন, মেজোবাবু আসবেন ও অন্যান্য (সৃষ্টিসুখ, ২০১৬)।
ওপার পৃথিবীর কথা
ওপার পৃথিবীর কথা বলো।
ঈর্ষাপ্রতিভারহিত ওপার পৃথিবীর
সরল সুখ ও আরও সুখের বার্তা
— দাও
আমি যার কথা অহরহ ভেবে থাকি
আমি তাকে অন্য কণার জীবন বলে বাদ দিই,
সে চলে যায়।
এই একফলা দাঁড়িয়ে থাকা ও দোলা,
এই নিজের তর্জনিকে সন্তানটি ভেবে আদর করা
ও সে আদর বাবার আদর বলে গাল পেতে নেওয়া—
এ অন্য কোনও গোলাকার পৃথিবীর,
সে অন্য কোনও কালচক্রের আমি
মন্ত্রগুপ্তি
মন্ত্রগুপ্তি শিখে আমাদের কী হল?
কাঠের পায়ের খোলে মদ রাখা শিখে কী হল?
কড়িচালা গুনে আমি জানতে পারলাম
কোথাও দূরে, আমি আজ কাল ভাল আছি।
নেই পায়ে ব্যথার দাপট কিছু কম।
জলের ওপর হেঁটে হেঁটে নদীর ওপারে গিয়ে
আমাদের এত বছরের সাধনা খোয়া গেল।
ব্রহ্মান্ডের খিলিপান
কী নিয়ে উঠে এলাম বুকের অমন মজলিশ থেকে?
কী বলে উঠে এলাম?
দ্বিরালাপ জমেছিল, কোলাহল, শরীরের কোল জুড়ে বিয়েবাড়ি
ছেড়ে, কেমন সে ব্রহ্মান্ডের খিলিপান আনতে
রাত থাকতে উঠে এলাম?
কে কে আজ সেই পান খাবে?
রাত থাকতে বুকের গোলকের মজলিশ ছিঁড়ে
উঠে আসা তবে কী?
একটাই রাস্তা এরপর চার চার আটদিকে ধেয়ে
খন্ড খন্ড ধু ধু এগিয়ে গেছে,
আর আছে ঝাঁ ঝাঁ রাত
কুচিকুচি করে কাটা, গাছপালা গ্যাসবাতিতে
ছড়ানো
হাসি খাতুন
সত্তরের দশকে জন্ম। সাহিত্য নিয়ে মাস্টার্স। কলেজ লেখার হাতেখড়ি। সেইসময় কবিতার থেকে প্রিয় ছিল ছোট গল্প লেখা। সঙ্গী ছিল বই আর বই। এখনো সেই সঙ্গীরাই রয়ে গেছে। ভাল লাগার উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র --প্রতিটি মানুষ, জনপদ এবং প্রকৃতির সুরের চিরকালীন উৎসবে মনোজগত বাঁধা পড়ে আছে। দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। "তবুও সুচেতনা জেগে থাকে" এবং " হৃদয়ের গল্প অভিমুখে "। প্রায় দুই দশক ধরে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত।
মগ্নতায়
বসতো চাই
সারাদিন স্ট্যাচু হয়েই কেটে গেল।
রোদ বৃষ্টির তোয়াক্কা ছাড়া
ভূমির অধিগ্রহণ
নদীখাতে বয়সের শৈত্য
ফেলে এসেছি যে
বহিরাগত কেউ
বৃষ্টি আসবে বলে
আলুথালু ছোটে
নক্ষত্রের গায়ে দাগ রেখে
আর নীল অন্ধকারে
বৃষ্টিকে সমস্ত আড়ষ্টতা উপহার দেয়।
এইসব ভেবে ভেবে
ফেলে রাখি
নাকফুলের হীরে খসে যাওয়া শহর,
পুরোন গলির বাঁকে
বিকেলের হাওয়ায়
দরজা খোলা
সংস্পর্শের মেঘ জলে
কেউ আসে ভিজে ভিজে
বহুদূর দেখা যার।
ফিরে এলে
ফিরে এলে?
বৃদ্ধ পৃথিবীর সাদা মুখ ঘাসের ভেতর গান গায়,
অপার্থিব শোন না কি?
ওদিকে শ্মশান আগেই নিভে যায় চিতা,
ধানক্ষেতের পাশে কিছু প্রশ্ন, উত্তরপত্রের জীবন
পালহীন নৌকোর পথে নির্জনে চাষ করে
ছায়াবন, রাজকন্যার চতুর্দোলা।
ফিরেছ তো!
আলো হাতে ভাঙা চাঁদ দেখে
শিশিরের সুখ আঙুলে জড়াই
সোনামুখী নদী ,ভাঙা গম্বুজের চিহ্নটুকু মোমরঙের
সমকালীন জ্যোৎস্নার প্রতিচ্ছায়া।
উধাও কবিতারা
গাছের ভেতর দিয়ে ডোরাকাটা রোদে
দিনভর শোরগোল হামাগুড়ি
কত হলদে পাতাদের ,
আগামী ঠিকানা ভুলে
বিপন্ন অতীত অনন্তের পথে
মাটি হয় ছায়াছায়া নদীপার ছুঁয়ে।
অতঃপর অচেনা পথিক
গান গেয়ে
পুবের হাওয়ায় জানালা পেরিয়ে
নশ্বর গাছতলা ও বিকেল হবে যায়।
আমি সভ্যতার রোপণ রেখেছি
সে জানালার ও পাশে
চাঁদ উঠলে হেঁটে যাব
নষ্ট ভ্রূণ কাঁধে বয়ে ঈশ্বরের পিছু পিছু।
অয়ন চৌধুরী
জন্ম: ১৯৯৩। বর্তমানে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। প্রথম কবিতা প্রকাশ ২০১০-এ। এরপর ভারত, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে অসংখ্য কবিতা প্রকাশ। এছাড়াও গল্প, গদ্য প্রকাশ। তবে অনিয়মিত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ তিনটি–নির্জন উপত্যকার শূন্য অনুভূতি(২০১২), স্বপ্নরঙের চিরকুট (২০১৩) ও যদি দু'টুকরো জেরুজালেম ছুড়ে দাও ঝুল বারান্দা থেকেই (২০১৭)। সম্পাদিত সাময়িকী স্রোত। লেখালিখির পাশাপাশি চিত্রশিল্পী ও প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। প্রিয় শখ ছবি তোলা ও রক মিউজিক।
বারুদ
প্রগাঢ় ভুলের মরশুম ভেঙে গড়িয়ে যাচ্ছে শেষ চিহ্ন
ঘাসের গায়ে আমাদের যত ঘাম, অশ্রু ও পীড়া লেগে রইল
তার জন্য দু'দন্ড নীরব ছিল বাতাস
হেমহাশূন্য, তোমার ভিতর আমি পড়ে যাচ্ছি
আমার শয্যা ও কামসহ
দূরে দেখা যায় একটা অগ্নিগর্ভ। কত যে নীচে বলতে পারি না
এই পতনাভিমুখী যন্ত্রণার সামান্য পাশ ঘেঁষে
একে একে ছিটকে গেল
প্রিয়জন । স্মৃতি ও মুহূর্তের শেষ নিশ্বাস
আবার একটা ভিড়। আবার একটা মিশে যাওয়া। আবার একটা মুখোশ
আর ভেঙে পড়া চাঁদের কিনারে যেখানে
জ্বলা মুখ উম্মুক্ত করে ফুঁসে উঠছে বিরহ বারুদ!
নিরুত্তর গর্ভশোক
প্রাচুর্যে বিস্মিত হয়েছে সকালের স্বরভাঙা ভারি জলকণা
এতশোক! এত আগুন!
সাইকেল চাকায় রক্তকণিকা পিষে চলে যায় দুরন্ত বালক
হলুদ স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ফেরি করে শতাব্দীর জরায়ু ভাঙা নিরুত্তর গর্ভশোক
সময়ের লতায় উল্টানো জ্যোৎস্না,
গড়িয়ে গেছে রূপকথার রক্ত
রেললাইন, বাসস্টপে শূন্যতার শাবক
প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে গাছেদের মা
তখন ল্যাম্পপোস্ট ভাঙছে নিয়ন আলোর বুক
গড়িয়ে যাচ্ছে অলিগলির স্তন ভাঙা দুধ
সন্তাপে হাত ধুচ্ছে প্রহরকালো এক গহীন নির্জনতায়
এভাবেই তো তোমার ঋজু প্রত্যাখ্যান সমস্ত শহরকে গর্ভবতী করেছে…
সমর্পণ
শুনিনিতো কোনও অসম্ভব রৌদ্রমাখাসংগীত
জলের কাছে প্রতিবিম্বের আয়ু ভেঙে নীরব থেকেছি শুধু
দু'পলক আতর গন্ধের মতো সামান্য আশমান
কীবা দিয়েছি!
হৃদয় ভর্তি নির্বিঘ্ন আত্মসমর্পণ ছাড়া!